কোনও বিভাগে একজনও কর্মী নেই। কোনও বিভাগে আবার সাকুল্যে দু’জন। আবার কেউ হাজিরা খাতায় ১০ দিন সই করেননি। সোমবার আচমকা পুরসভার কর্ম সংস্কৃতির হাল দেখতে বিভিন্ন বিভাগে ঢুকে এমন পরিস্থিতি নজরে আসায় ক্ষুব্ধ শিলিগুড়ি মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
কর্মীদের একাংশের সময় মতো অফিসে না আসা, অফিসে না এসেও পরে হাজিরা খাতায় সই করার প্রবণতার বিরুদ্ধে তিনি কড়া ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। নিয়ম মাফিক বেলা ১০ টা থেকে পুরসভার অফিস শুরু। মেয়র জানান, পৌনে এগারোটা নাগাদ পুর কমিশনার এবং পুর সচিবকে নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্ম ঘুরে দেখতে যান। সওয়া ১২ টা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে ঘোরেন। যাঁরা তখনও আসেননি হাজিরা খাতায় তাদের নামের পাশে লাল কালির দাগ দেন। পরবর্তীতে এমন হলে শো-কজ করা হবে বলে জানিয়েছেন।
পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগে তখন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্তত ২০ জন বাসিন্দা। কেন তাঁদের কাজ করা হচ্ছে না জিজ্ঞেসা করলে পুর কর্মীরা জানান, কম্পিউটারের লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়নি। সার্ভার রুমে খোঁজ নিতে বলেন মেয়র। আধিকারিকরা জানতে পারেন ওই বিভাগে কাজ করেন যিনি তিনি সংযোগ দিতে দেরি করেন। তাঁকে এ দিন সতর্ক করা হয়েছে। মেয়র বলেন, ‘‘নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘন্টা পরেও অনেকে অনেকে এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। দেরি করে অফিসে আসা বা না এসেও পরে হাজিরা খাতায় সই করার মতো অনিয়ম ঘটছে। অনেকে দেরি করে অফিসে আসেন, আর অফিসের সময়ের পরেও কাজ করে ‘ওভার টাইম’ দাবি করেন। এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১১ টা নাগাদ অ্যাসেসমেন্ট, পূর্ত, সাধারণ বিভাগ, ইউপিই সেলে অর্ধেকেরও কম কর্মী ছিলেন। ইউপিই বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারিং সেলের ১৬ জন কর্মীর একজনও ছিলেন না। ইউপিই সেলে তখন এসেছেন দু’জন। পূর্ত বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারিং সেলে ছিলেন এক জন কর্মী। অ্যাসেসমেন্টে ৯ জন কর্মীর মধ্যে এসেছিলেন ৭ জন। এস্টাবলিশমেন্টে ৭ জন কর্মীর মধ্যে ছিলেন মাত্র দু’জন। পুর অফিসে অর্ধেকের উপরে কর্মীরা তখনও আসেননি। অনেকে ফিল্ডে রয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে সে কথা ঠিক কি না দেখা হবে।
মেয়রের কথায়, নির্বাচন পরিস্থিতির জন্য গত দুই, আড়াই মাস পুরসভার প্রশাসনিক কাজকর্মের ক্ষতি হয়েছে। পুরসভার বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্ম মেয়র পারিষদরা এলাকায় ঘুরে দেখবেন। শহরের জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে কি না রাস্তায় নেমে দেখা হবে। পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকেরা রয়েছেন কি না, আচমকা গিয়ে সরেজমিনে দেখা হবে। আধিকারিকরা যেমন যাবেন তেমনই তিনি নিজেও যাবেন, জানিয়েছেন মেয়র। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হয়েছে কি না তা দেখবেন। পুরসভার প্রশাসনিক ব্যবস্থা, কর আদায় বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হবে। ডেপুটি মেয়রের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পুর দফতরের সচিবের কাছে যাবে। মেয়র বলেন, ‘‘জন স্বাস্থ্য এবং কারিগরি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী মঙ্গলবার এবং বুধবার শিলিগুড়িতে থাকবেন শুনেছি। তাঁর সঙ্গেও দেখা করতে আমি আগ্রহী।’’
পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে এ দিন পুর সভায় বৈঠক করেন মেয়র। তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে জলের চাপের কম থাকার জন্য সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার জায়গাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী বুধবার কলকাতায় পানীয় জল সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠক রয়েছে। শিলিগুড়ির জল প্রকল্পের উন্নয়নের বিষযটিও যাতে এর মাধ্যমে করা যায় সে জন্য পুর কর্তৃপক্ষ আর্জি জানাবেন। তবে ওই কাজ না-হওয়া পর্যন্ত বর্তমানে যে সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে তার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। ওই কাজের জন্য ৭ কোটি টাকা দরকার। পুরসভা ৩ কোটি টাকা দেবে। বাকি টাকার জন্য জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি দফতরের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হবে।