Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বন দাপাল কাঠ মাফিয়া

বনকর্মীরা জানান, কাঠমাফিয়াদের একটি দল গাঙ্গুটিয়া এলাকা দিয়ে কাঠ পাচার করবে বলে গত বৃহস্পতিবার পানা রেঞ্জে খবর আসে।

দুষ্কৃতী: এই সেই কাঠ মাফিয়ার দল। বনকর্মীদের তোলা ছবি।

দুষ্কৃতী: এই সেই কাঠ মাফিয়ার দল। বনকর্মীদের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে বনকর্মীদের দলটাকে ঘিরে ফেলেছিল ওরা। গায়ে ধাক্কা দিয়ে, জোর ধমক দিয়ে কাবুও করে ফেলে বনকর্মীদের। এরই মধ্যে দলের এক পুলিশ মোবাইলে ছবি তুলছিলেন। তাঁর হাত থেকে সেই ফোন কেড়ে তা ভেঙেও ফেলা হয়। সব শেষে দশ-বারো ঠেলা শাল কাঠ নিয়ে দাপটের সঙ্গে বেরিয়ে যায় কাঠ মাফিয়ারা। সম্প্রতি বক্সার জঙ্গলে গাঙ্গুটিয়া বিটের ৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টে এমনই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এই দলটির দাপটের কথা শুনে উদ্বিগ্ন প্রশাসন থেকে পরিবেশ প্রেমীরা।

বনকর্মীরা জানান, কাঠমাফিয়াদের একটি দল গাঙ্গুটিয়া এলাকা দিয়ে কাঠ পাচার করবে বলে গত বৃহস্পতিবার পানা রেঞ্জে খবর আসে। সেই মতো ন’জন বনকর্মী ও তিন সশস্ত্র পুলিশ বেলা ১১টা থেকে সেখানে টহল দেওয়া শুরু করেন। বিকেল চারটে নাগাদ গাঙ্গুটিয়া ৪ নম্বর কর্ম্পাটমেন্টে তাঁরা দেখতে পান, ১০-১২টি ঠেলায় শাল কাঠের লগ চাপিয়ে ৮০-৯০ জনের একটি দল আসছে। অভিযোগ, বনকর্মীরা পথ আটকালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বনকর্মীদের হুমকি দিতে শুরু করে কাঠ মাফিয়ারা। এক পুলিশ কর্মী মোবাইলে ছবি তুললে তাঁর মোবাইল কেড়ে ভেঙে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ, এর পর ধাক্কা দিয়ে বনকর্মীদের সরিয়ে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা কাঠ নিয়ে চলে যায় মাফিয়ার দলটি। বন দফতরের দাবি, বনকর্মীরা সংখ্যায় এতটাই কম ছিলেন যে, ওদের আটকাতে পারেননি।

বনকর্মীদের একাংশের কথায়, বিভিন্ন বনবস্তি ও চা বাগান সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় নিয়মিত ভাবে দলবদ্ধ হয়ে কাঠ মাফিয়ারা জঙ্গলে ঢুকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে বনকর্মীদের সঙ্গে সংর্ঘের ঘটনাও ঘটে। তবে এ ভাবে হুমকি দিয়ে কাঠ পাচারের ঘটনা বিরল।

এর আগে এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে বনকর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে এখনও প্রশাসনের শীর্ষস্তর কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেই দাবি। বন বিভাগের একটি অংশের কথায়, দ্রুত কোনও পরিকল্পনা না নিয়ে এই কাঠ পাচার চলতেই থাকবে।

পরিবেশপ্রেমী অনিমেশ বসু ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এ তো অবাধে লুঠ চলছে। এ রকম চলতে থাকলে বক্সা জঙ্গল আর থাকবে না। পৃথিবী জুড়ে অরণ্য সংরক্ষণের কাজ চলছে। প্রশাসনের উচিত এই ঘটনা রুখতে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া।’’

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ-ক্ষেত্র অধিকর্তা কল্যাণ রাই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে জানান, বিষয়টি নিয়ে কালচিনি থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। বনকর্মীরা ভাটপাড়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তার নামে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। বিশেষ করে যাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাকেও আলাদা করে ট্র্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Timber Mafia Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE