Advertisement
E-Paper

স্কুলে ঢুলে যায় পড়ুয়া, বোতলে নেশার গন্ধ

কোথাও মোমোর দোকানে বিয়ার। কোথাও পানের দোকানে ভদকা। বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির এমন রমরমায় তা এখন সহজেই চলে যাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে। তাই কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কের দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, স্কুল পড়ুয়াদের মদ খেয়ে হুল্লোড় কোথাওই আর অস্বাভাবিক নয়।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৩

কোথাও মোমোর দোকানে বিয়ার। কোথাও পানের দোকানে ভদকা। বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির এমন রমরমায় তা এখন সহজেই চলে যাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে। তাই কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কের দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, স্কুল পড়ুয়াদের মদ খেয়ে হুল্লোড় কোথাওই আর অস্বাভাবিক নয়।

অথচ বিধি অনুযায়ী নাবালক-নাবালিকাদের মদ বিক্রি করা যায় না। কিন্তু সে বিধি যে মানা হয় না, তা উত্তরবঙ্গে পাহাড়-সমতলের অনেক মদের দোকান এবং কিছু পানশালায় চোখ রাখলেই স্পষ্ট। কলেজে তো বটেই, একাধিক স্কুলেও নানা অনুষ্ঠানে মদ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। যার ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও উদ্বিগ্ন।

বালিগঞ্জের সানি পার্কে বন্ধুদের এক পার্টিতে গিয়ে মদ্যপানের পরে একাদশ শ্রেণির ছাত্র আবেশ দাশগুপ্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এই খবর উত্তরবঙ্গেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। রোহিণী থেকে সুকনা, চম্পাসারি থেকে বাঘা যতীন কার্ক, এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকে আশিঘর মোড়— চুপিচুপি মদের বোতল হাতবদল হওয়ার ঘটনায় আশঙ্কার মেঘ জমছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট বা দার্জিলিং জেলা পুলিশের আকাশেও। তাঁরা মাঝেমধ্যে অভিযান চালান। তাতে অবশ্য কাজের কাজ হয় না।

এমনই কিছু ঘটনা, এক ঝলকে।

বার-এ যাও, বাবার উপদেশ

রাত তখন ১০টা। রাস্তাঘাটে লোকজন কমে এসেছে। শিলিগুড়ি থানায় খবর এল, বাঘা যতীন পার্কের কাছে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে এক নাবালিকা। পুলিশ তাকে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তখনই তারা বুঝতে পারে, নেশার ঘোরে পার্কের কাছে পড়েছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি। চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে তার হুঁশ ফেরানো হয়। তার পর বাড়ির ঠিকানা জেনে তার বাবাকে ফোন করেন ডিউটি অফিসার। পেশায় বড় মাপের ঠিকাদার ও নানা ব্যবসায় যুক্ত ওই ভদ্রলোক থানায় এসেই তম্বি শুরু করেন মেয়ের উপরে, ‘‘তোকে এত টাকা হাত খরচ দিই! তা হলে পার্কে বসে না খেয়ে বার-এ যেতে পারিস না? পরিবারের মান-সম্মানের কথা মাথায় রেখে ভাল জায়গায় গিয়ে খেতে পারিস না?’’ এ কথা বলে মেয়েকে টেনে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান ওই ব্যবসায়ী। ঘটনার বিবরণ দিয়ে এক প্রবীণ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘এমন মানসিকতা থাকলে এমন বিপর্যয় রোখা সহজ নয়।’’

মদ্যপ ছাত্রী, স্কুলকেই দোষ

ক্লাসে পড়ানোর সময় শিক্ষিকা খেয়াল করলেন, সোজা হয়ে বসতে পারছে না এক ছাত্রী। বারবারই ঢুলে পড়ছে সে, মাথা ঠুকে যাচ্ছে বেঞ্চে। কোচবিহারের একটি গার্লস স্কুলে দশম শ্রেণির ঘটনা। শিক্ষিকা প্রশ্ন করলে ছাত্রীটি জানায়, রাত জেগে পড়তে হচ্ছে তো। তাই ক্লাসে বসে প্রবল ঘুম পাচ্ছে তার। তিনি ছাত্রীটিকে পাঠিয়ে দেন অসুস্থদের বিশ্রাম নেওয়ার ঘরে। ক্লাস শুরুর পরে তিনি খেয়াল করেন, আরও তিন জন একই ভাবে ঢুলছে। জিগ্গেস করলে তারাও বলে, রাত জেগে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। শিক্ষিকার সন্দেহ হয়। তল্লাশি চালাতে গিয়ে এক ছাত্রীর ব্যাগ থেকে তিনি উদ্ধার করেন ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। এবং পরীক্ষা করে দেখেন, তাতে মদ মেশানো রয়েছে। অভিভাবকদের ডাকা হয়। তাঁরা এসেই উল্টে স্কুল কর্তৃপক্ষকে দুষতে থাকেন। অভিযোগ করেন, স্কুলের সামনে কী ভাবে ঠান্ডা পানীয়ে মদ মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে! সে যাত্রায় চার ছাত্রীকে বকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বিয়ারে ঘুম, স্কুলকেই নোটিস

শিলিগুড়ির এক প্রান্তে একটি নামী ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুল। বার্ষিক খেলাধুলোর দিন সন্ধ্যায় চৌকিদার দেখেন, একটি ঘর ভেতর থেকে বন্ধ। ঠেলাঠেলি করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে দেখেন, অঘোরে ঘুমোচ্ছে পাঁচ ছাত্র। আর গোটা দশেক বিয়ারের বোতল গড়াগড়ি যাচ্ছে মেঝেয়। অভিভাবকদের খবর দেওয়া হল। বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে সুস্থ করা হল সকলকে। স্কুলের এক কর্তা জানান, এত সবের পরেও এক অভিভাবক উকিলের নোটিস পাঠিয়ে স্কুলের কৈফিয়ত তলব করেছিলেন। কেন স্কুলে নজরদারি নেই, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন এক অভিভাবক। ওই স্কুল কর্তার আক্ষেপ, ‘‘অভিভাবকের এমন মানসিকতা হলে তো মুশকিল!’’

এত বোতল! অবাক সাফাইকর্মী

শিলিগুড়ির কলেজ লাগোয়া একটি গলি। যার পরের গলিতেই পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বাড়ি। সন্ধ্যা হলেই সেই গলিতে বাইকে বসে ঠান্ডা পানীয়ের বোতলে মদ মিশিয়ে খাওয়ার দৃশ্য। টিউশন নিতে যাওয়া পড়ুয়াদের একাংশও সেখানে দু-চার চুমুক দিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পুরসভার সাফাইকর্মীরা জানান, রোজ কলেজের পেছনের নর্দমা থেকে গড়ে অন্তত ১০টি ভদকার বোতল, ১৫-২০টি বিয়ারের ক্যান, গোটা চল্লিশেক ঠান্ডা পানীয়ের বোতল মেলে। ওই এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। সম্প্রতি খোদ পর্যটনমন্ত্রীর স্ত্রী তথা এলাকার কাউন্সিলর শুক্লা দেবীও বাঘা যতীন পার্ক ও কলেজ লাগোয়া এলাকার হাল ফেরাতে ডেপুটেশন দিয়েছেন পুরসভার মেয়রকে।

minor liquor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy