ভোটার তালিকায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্কের আবহেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তথা সিএএ নিয়ে কোমর বাঁধছে গেরুয়া শিবির। সিএএ-তে কোন পদ্ধতিতে আবেদন করে নাগরিকত্ব পেতে হবে, তার প্রশিক্ষণ চলছে বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায়। সিএএ-তে নাগরিকত্ব পেতে হলে একাধিক নথি এবং শংসাপত্র চাই। বিশেষ করে বাংলাদেশ বা পড়শি যে দেশে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বসবাস করতেন, সেখানকার নথিও চাই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে হিন্দু বা পড়শি দেশে সংখ্যালঘু সেই শংসাপত্রও চাই। এই সব নথি কী ভাবে জোগাড় হবে এবং জোগাড়করতে গেরুয়া শিবির কোন কৌশলে ‘পাশে দাঁড়াবে’ সে সবই বলা হচ্ছে প্রশিক্ষণ শিবিরে। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রতিটি ব্লকে প্রশিক্ষণ হবে এবং সিএএ-তে আবেদন করাতে ক্যাম্পও করা হবে। পুরো প্রক্রিয়ার মাথায় রয়েছে সঙ্ঘ। তবে বিজেপি বা সঙঘ প্রকাশ্যে এই শিবিরের সঙ্গেজড়াচ্ছে না।
জলপাইগুড়ি জেলায় সিএএ নিয়ে পরপর প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে গেল। সে সবের আয়োজন করেছিল সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ।মহাসঙঘে উত্তরবঙ্গের পর্যবেক্ষক বাবুলাল বালা প্রতিটি শিবিরে ছিলেন। মহাসঙ্ঘের উত্তরবঙ্গের অফিস সম্পাদক শম্ভুনাথ মিস্ত্রী বলেন, “খুবই ভাল শিবির হল। সিএএ-তে আবেদন করতে কারও যাতে সমস্যা না হয়, সেটা আমরা দেখব। নথি জোগাড়ে সাহায্য করব। আমরা ক্যাম্প করে মানুষকে আবেদন করতে সাহায্য করব।”
গত লোকসভা ভোটের আগে দেশে সিএএ কার্যকর করা হয়। হঠাৎ রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে কেন সক্রিয় হচ্ছে গেরুয়া শিবির?
সূত্রের দাবি, তার নেপথ্যে থাকতে পারে ভোটার তালিকায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ তথা এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক। বিজেপি বিরোধীরা ইতিমধ্যে এসআইআরকে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত বলে অভিযোগ তুলেছে। তারই মাঝে অসম থেকে উত্তরবঙ্গের কয়েক জন নাগরিক আইনি নোটিস পাওয়ায় তা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল। হিন্দুদের নামও বাদ দেওয়া হবে বলে দাবি করছে। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, “বিজেপি ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছামতো নাম কাটতে চায়।”
পাল্টা বিজেপি শীর্ষ নেতারা একটিও ‘হিন্দু’ নাম বাদ যাবে না বলে গলা ফাটাচ্ছেন। তাতে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে দলেই প্রশ্ন রয়েছে। সেই আবহেই রাজ্যে এসআইআর শুরুর আগেই সিএএ-তে নাগরিক স্বীকৃতি আদায় করিয়ে দিতে তৎপরহয়েছে বিজেপি বা সঙ্ঘ। হাতে নাগরিকত্বের কাগজ থাকলে তালিকায় নাম থাকা নিয়ে সংশয় থাকবে না বলেই দাবি। মতুয়া মহাসঙ্ঘের শম্ভুনাথ মিস্ত্রী বলেছেন, “আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে সিএএ নিয়ে কাজ করছি।” অন্য দিকে জেলা বিজেপির এক নেতার কথায়, “সঙ্ঘের নির্দেশে সিএএ নিয়েযাঁরা কাজ করছেন, পতাকা ছাড়া তাঁদের পাশে দাঁড়াতে, সাহায্য করতে হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)