Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রাথমিকে বাড়ল বই, ব্যাগের ওজনও

বই-খাতা নিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের পিঠের ব্যাগের ওজন কতটা হওয়া উচিত সে-ব্যাপারে কয়েকমাস আগেই রাজ্যগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

অতিরিক্ত: নতুন বই পোরার পরে তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়ার ব্যাগের ওজন চার কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

অতিরিক্ত: নতুন বই পোরার পরে তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়ার ব্যাগের ওজন চার কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

নীহার বিশ্বাস
বুনিয়াদপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

প্রাথমিক স্কুলে বাচ্চাদের বইয়ের ব্যাগের ভার এ বার আরও অনেকটা বেড়ে গেল। নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে চতুর্থ— সব শ্রেণিতেই বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম শ্রেণিতে গতবার ছিল চারটে বই, এখন হল পাঁচটা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছিল তিনটে, এ বার হল পাঁচটা বই। তৃতীয় শ্রেণিতে আগে ছিল পাঁচটা, এখন হয়েছে আটটা। চতুর্থ শ্রেণিতে বই বেড়ে হয়েছে ন’টি। এর ফলে সার্বিক ভাবে কচিকাচাদের পিঠের বোঝা আরও ভারী হল।

বই-খাতা নিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের পিঠের ব্যাগের ওজন কতটা হওয়া উচিত সে-ব্যাপারে কয়েকমাস আগেই রাজ্যগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে, প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির বাচ্চাদের বইখাতা-সমেত ব্যাগের ওজন দেড় কেজির মধ্যে রাখতে হবে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ওজন বেঁধে দেওয়া হয়েছে দুই থেকে তিন কেজির মধ্যে। তৃতীয় শ্রেণির বইগুলির মোট ওজন দুই কেজির কিছু বেশি। চতুর্থ শ্রেণিতেও বইয়ের ওজন আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রায় তিন কেজি ওজন চতুর্থ শ্রেণির বইগুলির। যা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

কিন্তু বেসরকারি স্কুলগুলিতে তো নয়ই, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অনেক স্কুলেও ওই নির্দেশিকা মানা হয় না বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।

সূত্রের খবর, মাদ্রাজ হাইকোর্টের এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক বাচ্চাদের বইয়ের ওজন কমাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল। সেখানে এই রাজ্যের দেওয়া বইগুলির ওজনই তিন কেজির কাছাকাছি। বইয়ের ব্যাগ, জলের বোতল ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ব্যাগের ওজন চার কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে শিক্ষকদের দাবি। এতে শিশুদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।

এ দিকে, বইয়ের ওজন কমানো নিয়ে সরকারি কোনও নির্দেশিকা জেলা শিক্ষা দফতরে আসেনি বলে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক মৃণালকান্তি রায়সিংহ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বছরের থেকে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তবে ব্যাগের ওজন কমানো নিয়ে আমরা কোনও নির্দেশ পাইনি। আমার মনে হয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এই বিষয়টি মাথায় রেখেই বইয়ের সংখ্যা বাড়িয়েছে।’’

কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলি এ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেছে। সারা বাংলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ শীল বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার স্কুলের বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বইয়ের ওজনও অনেকটাই বেড়েছে। বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর আগে সরকারের এ নিয়ে আরও বেশি সচেতন হয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’’ নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আমরা করছি। বইয়ের বোঝা না কমিয়ে অবৈজ্ঞানিক ভাবে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এতে বাচ্চারা শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’

সূত্রের খবর, বুধবার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে নতুন বই দেওয়া হয়। বই হাতে পেয়েই চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে শিক্ষকদের।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্রের বক্তব্য, ‘‘সরকার বই কমালেও সমালোচনা হয়। বাড়ালেও হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই বইয়ের ওজন বাড়ানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Primary Education Books School Bag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE