কালিয়াচকের পর এ বারের ঘটনাস্থল খোদ মালদহের ইংরেজবাজার শহরে। রবিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ইংরেজবাজারের ঝলঝলিয়ার স্টেশন রোডে ঘটনাটি ঘটেছে। আহত অবস্থায় ওই ব্যবসায়ী ভর্তি রয়েছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, তার নাম শ্যামল শর্মা। তিনি পুরাতন মালদহ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চিতলপুর এলাকার বাসিন্দা। শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় এমন ঘটনা ঘটায় আতঙ্কিত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, এই রুটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুলিশি টহলদারির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ, এই রুটে ক্রমশ বাড়ছে বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি সহ নানা অসামাজিক কারবার। পুলিশ সব জেনেও চুপ রয়েছে।
এই বিষয়ে মালদহের মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাসের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, পুলিশের মদত পেয়েই জেলাতে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে দুষ্কৃতীরা। যার জন্য পর পর আক্রান্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, ‘‘জেলা পুলিশের কাছে আমরা মৌখিক ভাবে জানিয়েছে। এবার লিখিত ভাবেও জানাব।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্টেশন রোডের ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় নিয়মিত টহল ও অভিযান চালানো হয়। এবার থেকে আরও বাড়ানো হবে।’’
গত শুক্রবার রাতেই কালিয়াচকের কালিকাপুরে লিফট চেয়ে দুই দুষ্কৃতী মহম্মদ ইনদাদুর রহমান নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীর মোটর বাইকে উঠে তাঁকে মারধর করে টাকা, মোবাইল ও মোটর বাইক লুট করে পালায়। বাধা দেওয়াতেই ইনদাদুরবাবুর ডান পায়ে গুলি করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় বাসিন্দারা ভর্তি করেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে তাঁর আঘাত গুরুতর থাকায় শনিবার বিকেলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা স্থানান্তরিত করেন কলকাতায়।
এই ঘটনার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই ফের ব্যবসায়ীর উপর আক্রমনের ঘটনা ঘটে। এবার ঘটনাস্থল ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ার স্টেশন রোডের কার্নি মোড় সংলগ্ন এলাকায়। পুরাতন মালদহ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চিতলপুর এলাকার বাসিন্দা শ্যামল শর্মা দার্জিলিং মেলে করে কলকাতা থেকে মালদহে আসেন এদিন ভোরে। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পায়ে হেঁটে গাড়ি ধরার জন্য স্টেশন থেকে রথবাড়ি যাচ্ছিলেন। স্টেশন রোডের কার্নি মোড় পার হতেই আচমকা দুই যুবক শ্যামলবাবুর পথ আটকায় বলে অভিযোগ। পথ আটকে তাঁর কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা দাবি করেন। তিনি না দেওয়াতেই তাঁর কাছে থাকা একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হলে হঠাৎই এক যুবক ছুরি দিয়ে পেটে আঘাত করে। শ্যামলবাবু চিৎকার শুরু করলে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা কিছু রিকশাচালক ও সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন। এরপরেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় ওই দুই দুষ্কৃতী। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্যামলবাবুকে ভর্তি করা হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজবাজারের রবীন্দ্র ভবনে তাঁর দাদা দীপক শর্মার ব্যবসায়ে কাজ করেন তিনি।
এদিনই দুপুরে শ্যামল বাবুর পরিবারের লোকেরা ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। শ্যামলবাবুর দাদা তথা ব্যবসায়ী দীপক শর্মা বলেন, ‘‘আমার ভাই ছাড়াও আরও অনেক কর্মী কলকাতায় নানা কাজে যায়। তবে এমন ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কিত। কারণ স্টেশন রোডের মতো এলাকাতেই ঘটল এমন ঘটনা। এলাতেই বেআইনি মদের কারবার থেকে নানান অসামাজিক কাজকর্ম চলে। রাতের দিকে প্রচুর ট্রেন মালদহ থেকে থাকায় যাত্রীরা রাতবিরেতে যাতায়াত করে। পুলিশকে এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য রুখতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করা উচিত। এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তথা ইংরেজবাজার পুরসভার তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার বলেন, ‘‘এদিন ঠিক কী ঘটেছে তা আমি বলতে পারব না। পুলিশ টহল দেয়। যাতে টহল দারি আরও বাড়ানোর হয় তার জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy