Advertisement
E-Paper

কেন খুন, আঁধারে পুলিশ

পুলিশ জানিয়েছে, পিনাকীবাবুর বাড়ি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহানন্দাপাড়ায়। পাশেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেয়র অশোকবাবুই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:২৫
শোকস্তব্ধ পিনাকী দত্তের পরিজনেরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শোকস্তব্ধ পিনাকী দত্তের পরিজনেরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শিলিগুড়ির হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলের খুনের ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সেবক রোডের একটি পেট্রোল পাম্প লাগোয়া এলাকায় পিনাকী দত্তকে (৪৪) কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনাস্থলে প্রায় ১০ মিনিট রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বিভিন্ন সূত্র এবং তথ্য পুলিশ খতিয়ে দেখা শুরু করলেও সুস্পষ্টভাবে খুনের কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনও কিছু জানাতে পারেনি। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আতঙ্ক দূর করতে অবিলম্বে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস এবং শিলিগুড়ি হার্ডওয়ার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি প্রধুমান সিংহ চৌহান বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে এই খুনের ঘটনায় ব্যবসায়ী, বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশকে দ্রুত খুনিকে খুঁজে বার করতে হবে।’’

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার এবং ১ মে থাকায় এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। ঘটনাস্থল লাগোয়া কয়েকটি পানশালা রয়েছে। পিনাকীকে রাস্তার মোড়ে অন্ধকারে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান বাসিন্দারা। স্থানীয় একটি দোকানের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। অস্পষ্ট ছবিতে সাদা জামা পরা এক যুবককে দেখা গিয়েছে। পরে ওই যুবককে বিধানরোডের দিকে হেঁটে চলে যেতেও দেখা গিয়েছে। নিহতের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে তিনি কোনও গোলমালে জড়িয়েছিলেন তা দেখছে পুলিশ। ঘটনার রাতেই হাসপাতালে যান মেয়র অশোক ভট্টচার্য। অশোকবাবু বলেন, ‘‘ভর সন্ধ্যায় সেবক রোডে খুন। ভাবাই যায় না! খুন যে কারণেই হোক, অবিলম্বে দুষ্কৃতীকে ধরতে হবে। ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার রাতে ঘটনাস্থলে তদন্তের তদারকি শুরু করেন। নিহতের শ্যালক পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে কারও নাম বা সন্দের কথা অবশ্য উল্লেথ নেই। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এক যুবকের সঙ্গে একটি দোকানের সামনে পিনাকী ছিল বলে জানা যাচ্ছে। আশেপাশে আরও কেউ ছিল কি না তা দেখা হচ্ছে। খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। আমি চেষ্টা করছি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, পিনাকীবাবুর বাড়ি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহানন্দাপাড়ায়। পাশেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেয়র অশোকবাবুই। নিহতের স্ত্রী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা। দুই মেয়ে স্কুলপড়ুয়া। নিহতের বাবা’র হিলকার্ট রোডে হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে। বিয়ের পর পারিবারিক গোলমালের জন্য স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে আলাদা থাকতেন পিনাকীবাবু। এখন হাকিমপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। দোকান বাবা এবং ছোটভাই চালান। কখনও সারের বা ওষুধের সংস্থায়, কখনও লোহার সংস্থার চাকরি করেছেন। সম্প্রতি ছোটখাটো ব্যবসাও শুরু করেছিলেন পিনাকীবাবু। তবে তা পরিস্কার নয়।

পুলিশ এবং তাঁর পরিবারের সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরেই পিনাকীর জীবনযাপন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন পরিচিতেরা। মাসখানেক আগে বাবুপাড়া এলাকায় গোলমালে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। কয়েকদিন আগেই তাঁর কাছে হাজারখানেক টাকার জন্য এক যুবক বারবার ফোন করেছে বলেও স্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন। তবে সে কে বা তার কারণ বলেননি। রবিবার বিকাল ৫টা নাগাদ তিনি হাকিমপাড়ায় থেকে হেঁটেই একটি নার্সিংহোমে পাশ দিয়ে বিধানরোড হয়ে সেবক রোডে গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে কী করে এমন ঘটনা ঘটল তা তাঁরা কিছুই বুঝতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন, নিহতের শ্যালক এবং ভাই দুই জনই।

সোমবার সকালে শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকে দেহটি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত করানো হয়। পরে দেহ মহানন্দপাড়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ধারাল অস্ত্রের আঘাত এবং রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন। এ দিন ওই বাড়িতে যান এলাকার বাসিন্দা সিপিআই (এমএল) নেতা অভিজিৎ মজুমদার, প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক কুন্তল গোস্বামী, এলাকার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর বিনিময় মৌলিকরা। বিনিময়বাবু নিহতের স্ত্রী’র আত্মীয়ও। তাঁরা সকলেই জানান, ছোটবেলা থেকে পিনাকীকে দেখেছেন। খুব বেশি কারও সঙ্গে মিশত না। স্ত্রীও পাড়ার মেয়ে। দীর্ঘদিন ধরে শি‌ক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। পারিবারিক সমস্যার জন্য অন্য জায়গায় থাকলেও পিনাকীকে সেবক রোড চত্বরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। সেখানেই সন্ধ্যায় তিনি খুন হয়ে যাবেন তা ভাবতেই পারছেন না পরিচিতরা।

Butchered Death Pinaki Dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy