দার্জিলিংয়ের ‘ল্যান্সডাউন প্রপার্টি’-তে কোনও দখলদার রয়েছে কি না, তা পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দিতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রায় তিন একর জায়গার ওই সম্পত্তিতে ‘গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর (জিটিএ) নতুন সচিবালয় গড়ার কথা।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জিটিএ-র মুখ্যসচিব, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক ও ওই সম্পত্তির বর্তমান মালিক কিশোরীলাল আগরওয়ালকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক কমিটি গড়ে দিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ওই সম্পত্তি পরিদর্শন করে এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে পরিদর্শন রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
জিটিএ-র আইনজীবী অয়নাভ রাহা জানান, ‘ল্যান্সডাউন প্রপার্টি’-র প্রথম মালিক ছিলেন কোচবিহারের মহারাজা জগদীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর। জমিটি দার্জিলিংয়ের লালকুঠির কাছে এবং আদতে তা একটি ‘হিলটপ’। ১৯৭০ সালের আগে মহারাজা ওই জমি তাঁর স্ত্রী মহারানি জর্জিনা মে নারায়ণকে দান করেন। মহারানি জর্জিনা ওই জমি ১৯৭৮ সালে বিক্রি করেন কিশোরীলালকে। বিক্রি করার কিছু দিনের মধ্যে রাজ্য সরকার কিশোরীলালকে জানায়, জমিটি খাস হয়ে গিয়েছে। কিশোরীলাল জেলার কালেক্টরের কাছে অভিযোগ জানান। কালেক্টর বেশ কয়েকটি শুনানির পরে ১৯৯৪ সালের ১ ডিসেম্বর কিশোরীলালকে জানিয়ে দেন, ১৯৮০ সাল থেকে জমিটি আর খাস নেই।
অয়নাভ জানান, এর মধ্যে দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন শেষ হয়ে সুভাষ ঘিসিং ক্ষমতায় আসেন। তিনি কিশোরীলালকে জানিয়ে দেন, নতুন সচিবালয়ের জন্য জমিটি নেওয়া যেতে পারে। তখন জমি কেনা হয়নি। ২০১৩ সালে জিটিএ গঠনের পরে একত্রিত (কম্পোজিট) একটি সচিবালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জেলাশাসক জমির মূল্যায়ন করেন ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ২১ হাজার ৮৭ টাকা। তার পরেও ‘ল্যান্সডাউন প্রপার্টি’ কিনতে জিটিএ কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী না হওয়ায় হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে ২০১৪ সালে মামলা করেন কিশোরীলাল।
জিটিএ-র আইনজীবী জানান, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৪ সালের ১৫ মে একটি কমিটি গড়ে জমির সঠিক মূল্যায়ন করতে বলেছিলেন। ওই কমিটিতে ছিলেন জিটিএ-র এগজ়িকিউটিভ মেম্বার (আইন) জ্যোতিকুমার রাই, এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (অর্থ) ডন বসকো লেপচা, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জমি) গোপাল লামা, জেলা জমি অধিগ্রহণ দফতরের অফিসার ডিটি দুকপা, জমি সার্ভেয়ার এসকে দত্ত এবং কিশোরীলাল নিজে। কমিটি গড়ে দিলেও মামলাটির নিষ্পত্তি করেননি বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই কমিটি ‘ল্যান্সডাউন প্রপার্টি’-র দাম ঠিক করে ৫ কোটি ২১ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৮৯ টাকা। জিটিএ কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব নেন, জমি কেনার জন্য রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ রাজ্যের কাছে আবেদন জানালে, সরকার জানিয়ে দেয়, ওই জমি অধিগ্রহণ না করে নতুন আইন অনুযায়ী সরাসরি কিনে নেওয়া যেতে পারে। তা জেনে জিটিএ কিশোরীলালকে আগাম দু’কোটি টাকা দেয়।
অয়নাভ জানান, ২০১৭ সালে বিনয় তামাং জিটিএ-র তত্ত্বাবধায়ক প্রধান হন। কিশোরীলালের নিষ্পত্তি না হওয়া মামলাটি স্থানান্তরিত হয় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার আদালতে। ২০১৮ সালে কিশোরীলাল তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে ফের মামলাটি শুনানির জন্য তোলেন এবং জিটিএ কর্তৃপক্ষকে জমিটি কিনে নেওয়ার নির্দেশ দিতে বলেন। বিচারপতি মান্থা জিটিএ কর্তৃপক্ষকে পুরো টাকা মিটিয়ে দিতে বলেন। তার জেরে জিটিএ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সমাদ্দারের আদালতে আপিল মামলা দায়ের করেন। মামলার আবেদনে বলা হয়, ‘ল্যান্সডাউন প্রপার্টি’ দখলমুক্ত নয়। দখলমুক্ত করে দিলে জমি কিনে নেওয়া যেতে পারে।
এ দিন সেই মামলার শুনানিতে কিশোরীলালের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, জিটিএ এখন দখল থাকার অভিযোগ তুলছে। জিটিএ-র আইনজীবী জানান, জমির মালিক আগে জানাননি ওই জমিতে দশ জন দখলদার রয়েছে। রাজ্যের পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার আদালতে জানান, জমি কেনার ব্যাপারে রাজ্য অনুমতি দেবে কি না, তা তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে এসে আদালতে জানাবেন। তবে জিটিএ সরাসরি ওই জমি কিনতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy