খুশি অর্জমা। নিজস্ব চিত্র।
কঠিন জীবন সংগ্রাম পেরিয়ে সাফল্যের তালিকায় উঠে আসা দুই কৃতী ছাত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ শিক্ষক থেকে প্রতিবেশিরা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুলের কলা বিভাগের ওই দুই মেধাবী ছাত্রী সংযুক্তা ঘোষ এবং অর্জমা সরকার এ বারের উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে সম্ভাব্য নবম এবং দশম স্থানের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। সংযুক্তা পেয়েছে ৪৮৪ নম্বর। অর্জমার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৩। প্রধানশিক্ষিকা ভবানী সরকার বলেন, ‘‘সমস্ত বাধা ঠেলে ওঁদের লড়াইয়ের পিছনে শিক্ষিকাদের নজরদারি এবং সহায়তাও কাজ করেছে।’’
সংযুক্তার যখন পাঁচ বছর বয়স। বাবা দিলীপ ঘোষ তাঁদের ছেড়ে চলে যান। এখনও কোনও সম্পর্ক নেই তাঁদের সঙ্গে, জানায় সংযুক্তা। সেই থেকে তাঁর প্রতিবন্ধী মা ঝুমুরদেবী মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন বাপের বাড়িতে। শুরু হয় কঠিন লড়াই। বাড়িতে দর্জির কাজ করে ঝুমুরদেবীর সামান্য আয় এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক বৃদ্ধ বাবা মিলনবাবুর পেনশনের সামান্য টাকার উপর ভরসা করে সংযুক্তার লেখাপড়া ও চার জনের টানাটানির সংসার। স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হয়ে মিলনবাবু দীর্ঘ দিন ধরে শয্যাশায়ী। তাঁকে সামলে ঝুমুরদেবীর লড়াইয়ে পাশে দাঁড়ানো শহরের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা সংযুক্তার দিদা অঞ্জলিদেবীর সাহসিকতা ও লড়াইকেও কুর্নিশ জানাচ্ছেন আত্মীয় ও পড়শিরা। এ দিন তিনিই স্কুলে নাতনিকে সঙ্গে করে মার্কশিট নিতে আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘গৃহশিক্ষকের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে ওর ভালোমন্দ নিয়েই দিন কেটে যেত।’’
সংযুক্তারই সহপাঠী অর্জমার অদম্য লড়াইয়ের পিছনে রয়েছে তার বাবা-মায়ের অবদান। হিলি হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক বাবা অশোক সরকার বালুরঘাট থেকে রোজ হিলি যাতায়াত করে রাতে বাড়ি ফিরে মেয়েকে নিয়ে বসতেন অঙ্কের পাঠ দিতে। পাশাপাশি ৮ জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়েছেন অর্জমা। সব মিলিয়ে দিনে প্রায় ১১ ঘণ্টাই কেটে যেত পড়াশোনায়। রহস্য গল্প পড়া ও গান শেখার ফাঁকে ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় নিয়মিত যোগ দিয়েও সফল হয়েছেন তিনি।
অর্জমার দিদি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কে এমএসসি করে এখন পিএইচডি করছেন। অর্জমার কথায়, ‘‘দিদি বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও নিয়মিত আমাকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে। অমর্ত্য সেনের আদর্শ সামনে রেখে অর্থনীতিবিদ হয়ে ওঠার স্বপ্ন অর্জমার। ভবিষ্যতে অধ্যাপনা ও গবেষণায় আগ্রহী সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy