বিমান চলাচলের উদ্বোধন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ ফের চরমে উঠল। মঙ্গলবার কোচবিহার-কলকাতা উড়ান পরিষেবা চালু হয়। কলকাতা থেকে ওই বিমানে পাঁচ যাত্রী কোচবিহারে পৌঁছন। ওই পাঁচ জনই বিজেপির বিধায়ক। তৃণমূলের এক প্ৰতিনিধি দলের ওই বিমানে কলকাতা থেকে কোচবিহার ফেরার কথা থাকলেও তাঁরা কেউই তাতে চাপেননি। দলীয় সূত্রে খবর, প্রথমে ঠিক ছিল বিমানের ছ’টি আসনে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কিন্তু পরে পাঁচ জন বিজেপি বিধায়ককে সংস্থার তরফে টিকিট দেওয়া হয়। কেউই অবশ্য মুখে সে কথা স্বীকার করছেন না।
শিলিগুড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহার বিমানবন্দর করে দিলাম আমরা। ওখানে একটি নদী মতো আছে। সেখানে সেচের কাজ হয়েছে প্রায় ২৫০-৩০০ কোটি টাকা খরচ করে। আর সবুজ ফ্ল্যাগ তুলে বিজেপির বিধায়কেরা তাতে ঘুরে বাই বাই করছেন।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘তাও সিঙ্গল ইঞ্জিন, ডবল নয়। আমি মনে করি, সিঙ্গল ইঞ্জিনে ঝুঁকি আছে। সিঙ্গল ইঞ্জিনে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। ডবল ইঞ্জিন বিমান চাই আমরা।’’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘মানুষ বিপদে পড়লে ছেড়ে কথা বলব না। আর ওই বিমানে ন’জন যাতায়াত করতে পারবেন। এর কোনও মূল্য আছে! কোচবিহারের বিমানবন্দর আরও বড় করছি আমরা। যাতে বড় বিমান নামতে পারে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বৈষম্য-বিভাজনের রাজনীতি হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের বাদ দিয়ে অন্তত উন্নয়নের ওই কাজগুলি হবে না। যখন দেখলাম, সব কিছুতেই মেরুকরণ। তখন তা মেনে নিতে পারলাম না। পটেটো ও পটেটো চিপস এক নয়।’’
বিজেপি অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই বৈষম্যের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে। এ দিন পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে স্বাগত জানাতে কোচবিহার বিমানবন্দরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তিনি দাবি করেছেন, বিমান উদ্বোধনে রাজ্য সরকারকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, কোচবিহার থেকে বিমান চলাচল করুক। তা নিয়ে বিতর্ক চাই না। বিমান পরিষেবা চালুতে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি।’’ ওই বিমানে কোচবিহারে ফেরা নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা বিমান চলাচলের আশ্বাস দিয়েছিলাম। তা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ। আর বিমান চলাচলের কৃতিত্ব অনেকে দাবি করছেন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। বিমান পরিষেবা স্থায়ী রাখা আমাদের দায়িত্ব।’’
আমদাবাদের সংস্থা ‘ইন্ডিয়া এয়ার ওয়ান’ নয় আসনের বিমান চলাচল শুরু করেছে। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিমানটি দমদম থেকে কোচবিহার রওনা হয়। দুপুর দু’টো নাগাদ তা কোচবিহার পৌঁছয়। ৩টে ৪ মিনিট নাগাদ পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে বিমান কলকাতা রওনা হয়। ওই যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন একজন কৃষক, একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, একজন শিল্পী। তাঁদের হাতে টিকিট তুলে দেন নিশীথ। ২২ ফেব্রুয়ারি বিমান চলবে না। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত বিমান চলবে বলে জানানো হয়। বিমান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ৩ মার্চ পর্যন্ত টিকিট ‘বুক’ রয়েছে। তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। শুরুর কয়েকদিন কেন্দ্র সরকারের ভর্তুকিতে ৯৯৯ টাকা ভাড়ায় কলকাতা যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সংস্থার তরফেই জানানো হয়েছে, চালুর একদিন আগে থেকেই অনলাইন বুকিং চালু হয়েছে। ওই অল্প সময়ে কী করে এত টিকিট ‘বুক’ হল? সংস্থার তরফে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। এ দিন বিমানবন্দর কার্যত বিজেপি কর্মীদের দখলে চলে যায়। ব্যান্ড-পার্টি নিয়ে মেতে ওঠেন তাঁরা। বিমানবন্দরের বাইরে শাসক-বিরোধী ফেস্টুনে ছয়লাপ করে বিমান চালুর কৃতিত্ব দাবি করে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)