সিতাইয়ে ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে কোচবিহারের পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ এসএফআই ও ডিওয়াইএফের। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে তার ঘরের সামনে থেকেই মুখ চেপে ধরে দশম শ্রেণির ছাত্রীটিকে কলাবাগানের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। চিৎকার করে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় তারপরে ছাত্রীটির মুখের মধ্যে খড় আর ঘাস গুঁজে দেওয়া হয়। এরপরে ধর্ষণ করা হয় তাকে। সে সময় ছাত্রীটি বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকলে তাকে খুন করে ফেলা হয়।
সিতাইয়ের ভোলাচাতড়া গ্রামে বুধবার সকালে নিজের বাড়ির কাছেই কলাবাগানে রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায় ওই ছাত্রীর। শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকাতেই। দরিদ্র পরিবারের সন্তান এই কিশোরীর পড়াশোনায় মন ছিল। তার মৃত্যুতে হতবাক হয়ে যায় গোটা গ্রামই। বিস্ময়ের অবশ্য তখনও কিছু বাকি ছিল। সেই দিনই তাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ওই কিশোরীর এক সহপাঠীকেই। তার বাড়ি কেশরীবাড়ি এলাকায়। সে নাবালক। তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের মাধ্যমে জলপাইগুড়ির একটি হোমে পাঠানো হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ দাবি করে যে, তারা জানতে পেরেছে, মূল অভিযুক্তের নাম হজরত আলি। বৃহস্পতিবার শীতলখুচি থানার পঞ্চারহাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপরে গ্রেফতার করা হয় রফিকুল মিয়াঁ নামে আরও এক অভিযুক্তকে। হজরত খুনের কথা স্বীকারও করে নিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “ওই তিনজন খুনের ঘটনায় জড়িত। আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। ধৃতদের যাবতীয় পরীক্ষা করা হবে।”
এ দিন বিকেলে হজরত ও রফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়। আজ, শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করানো হবে। রাতেই পুলিশ সুপার সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিকরা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। বুধবার রাতে যে কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়, পুলিশ সূত্রের খবর, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে এক সময় একই স্কুলে পড়াশোনা করত সে। বর্তমানে মুর্শিদাবাদের একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করছে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, হজরতের সিতাই বাজারে একটি লটারির দোকান রয়েছে। সে বিবাহিত। কয়েক মাস ধরে নানা ভাবে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেষ্টা করে সে। এক মাস আগে ওই ছাত্রীকে একটি মোবাইল ফোনও হজরত কিনে দেয়। সিমকার্ডও জোগাড় করে দেয়। নানা প্রলোভন দেখিয়ে হজরত ওই ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করে। তাতে ওই ছাত্রী রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল হজরত। ওই ফোনেই হজরত নিয়মিত ছাত্রীটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে ওই ছাত্রীর বাড়ির লোক জানতেনই না যে তার কাছে একটি মোবাইল ফোন রয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাতে মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় ওই ছাত্রীর সঙ্গে হজরতের যোগাযোগ হয়। দোকান শেষ করে একটি সাইকেলে চেপে হজরত ওই বাড়ির সামনে যায়। তখন আবার মোবাইলে কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু ছাত্রীটির মোবাইল ব্যস্ত ছিল। শেষপর্যন্ত সাইকেলটি বাইরে রেখে হজরত সোজা ওই বাড়িতেই ঢুকে যায় বলে তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন। বাড়িতে সকলেই দরজা এঁটে ঘুমিয়ে ছিলেন। ছাত্রীটি ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, তখনই তার মুখ চেপে ধরে কলাবাগানের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
খুনের পরে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে হজরতই মোবাইলের সিম কার্ডটি খুলে নেয় বলে তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই মোবাইল ফোন থেকে কোন কোন নম্বরে ফোন করা হয়েছিল, বা কারা ফোন করত, তা খোঁজ নিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই রাতে কিশোরীটি কাকে ফোন করছিল, যে কারণে হজরত তার ফোন পায়নি, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওই ছাত্রীর দাদা বলেন, “অভিযুক্তদের চরম শাস্তি চাই। যাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর কথা আর কেউ না ভাবেন।”
ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন ডিএসও দিনহাটা মহকুমায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সংগঠনের অভিযোগ, ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার করতে গেলে সিতাইয়ে তাদের ৩ সমর্থককে মারধর করে তৃণমূল। ডিএসও-র জেলা সম্পাদক সিতাইয়ের বাসিন্দা বিষ্ণু বর্মনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও দাবি। সংগঠনের আজিজুল হক বলেন, “দুষ্কৃতীদের চরম শাস্তির দাবি করেছি আমরা। পুলিশ, প্রশাসন ও সরকারের অপদার্থতার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।” এ দিন কোচবিহার পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই এবং ডিএসও। তৃণমূলের সিতাই ব্লক সভাপতি জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “পুলিশ খুব দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। ওই সংঠনের বন্ধে প্রভাব পড়েনি। তাই মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy