চিন্তিত: চকবাজারে মিছিলে গুরুঙ্গ। বিশ্বরূপ বসাক
মিটিং-মিছিল উপেক্ষা করে মঙ্গলবার সকাল-বিকেল মিলিয়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটার হেঁটে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনে জনে জানতে চাইলেন, সমস্যা হচ্ছে কি না।
ভরা পর্যটন মরসুমে মিছিলের ফলে হয়রানি হয়েছে, জানান কয়েক জন। তা শুনে এডিজি (উত্তরবঙ্গ) নটরাজন রমেশবাবুকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, জনাকীর্ণ রাস্তা যাতে মিছিলে থমকে না থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ সময়টা ভিড়ে ঠাসা থাকে দার্জিলিং। এখন মিছিল-মিটিং করে পর্যটকদের হয়রান করাটা ঠিক নয়। পুলিশকে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে হবে।’’
এ দিন ম্যাল চৌরাস্তা বা শ্রাবেরি নাইটেঙ্গল পার্ক, সব জায়গাতেই পর্যটকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে হইহই করে ওঠেন। কেউ এগিয়ে এসে হাত মেলান। পূর্ব মেদিনীপুরের আনন্দ মাইতি অথবা ঝাড়খণ্ডের প্রবাসী বাঙালি প্রীতিকণা ভাদুড়ি প্রায় একই সুরে বলেন, ‘‘আমরা তো আন্দোলন শুনে বুকিং বাতিল করে দিচ্ছিলাম। যেই শুনলাম মুখ্যমন্ত্রী নিজে পাঁচ দিন থাকবেন, আর কিছু ভাবিনি।’’
ভরা মরসুমে মোর্চার আন্দোলনের ঘোষণায় খুচখাচ বুকিং বাতিল হয়েছে। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর লম্বা সফরে যে পর্যটকমহল স্বস্তি পেয়েছে, সেটা পাহাড়ের একাধিক হোটেল মালিক একান্তে মানছেন। তাঁদের কথায়, পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, মন্ত্রিসভার বৈঠক করবেন, তাঁর সঙ্গী হিসেবে ৪০-৪২ জন মন্ত্রী, সচিব, খোদ ডিজি থাকবেন— এটা শোনার পরে অনেকেই সিদ্ধান্ত বদলে থেকে গিয়েছেন।
তবে ক্যাবিনেট মিটিংয়ের ধাক্কায় গাড়িতে টান পড়েছে। তাই দার্জিলিঙের জন্য বাড়তি বাসের ব্যবস্থা করেছে এনবিএসটিসি। সংস্থার শিলিগুড়ির ডিভিশনাল ম্যানেজার বিকাশ দাস জানান, এমনিতে দার্জিলিঙের জন্য ৫টি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। আমরা ৮টি বাস দিয়েছি। আবার অনেক সময় বেশি পর্যটক একসঙ্গে চলে এলে আরও অতিরিক্ত বাস দেওয়া হচ্ছে।
মে মাস থেকে স্কুল-কলেজে গরমে ছুটি পড়তেই পাহাড়ের পর্যটন মরসুম শুরু হয়ে যায়। পর্যটন দফতরের হিসেব অনুসারে, বর্তমানে এই অঞ্চলে বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ৬০ হাজারের বেশি দেশ-বিদেশের পর্যটক ঘুরছেন। তবে মোর্চার আন্দোলনের খবরে পর্যটন মরসুমে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। পর্যটন সংগঠন এতোয়ার সদস্যরা জানান, অনেকেই বুকিং বাতিলের জন্য খোঁজখবর করছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের বার্তা হাওয়া ঘুরিয়ে দেয়। সংগঠনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘আমরা চাই পাহাড় শান্তিতে থাকুক। পাহাড় পর্যটকেরা সব সময় উপভোগ করুক।’’
পাহাড়ে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ মুখ্যমন্ত্রী আরও তিন দিন থাকবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি আর কী ঘোষণা করেন, আরও কতটা পথ হাঁটেন, তার হিসেব কি করতে পারবেন বিমল গুরুঙ্গ? এ দিন মিটিং-মিছিলের পরেও তাই মোর্চার দফতরে মেঘ-রোদের খেলা। এবং হিসেব গোলমালের আশঙ্কা প্রতিপদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy