জাতীয় সড়কে মাঝেমধ্যেই যানজট থাকে। এ দিনও ভেবেছিলাম যানজটেই বুঝি মাটিগাড়াতে আটকা পড়েছি। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ সামনের গাড়ির চাকা গড়াচ্ছেই না। আধ ঘণ্টা এ ভাবেই পেরিয়ে গেল। সকালের দিকটা আকাশ মেঘলা ছিল। কিন্তু বেলা গড়াতেই রোদের তেজ বাড়তে শুরু করেছে। বাসের ভিতরে গরমও বাড়ছে। বাধ্য হয়ে বাস থেকে নেমে খোঁজ নিতে গেলাম। যা শুনলাম তাতে চমকে উঠলাম! পুলিশের নাকি একটি মিছিল হবে, তার পরে গাড়ি ছাড়া হবে। এ-ও জানলাম, সেই মিছিল বের হতে বাকি আরও এক ঘণ্টা। ততক্ষণ এই গরমে বাচ্চাগুলো বাসে বসে থাকবে? ছেলেমেয়েগুলো সেই কখন বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছে, গরমে অপেক্ষা করে করে অসুস্থ হয়ে পড়বে তো!
প্রায় দশ বছর ধরে একটি স্কুলের বাস চালাই। ছুটির পরে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে বাগডোগরায় যেতে হয়। সকালবেলা ছেলেমেয়েগুলি খাওয়াদাওয়া করে বাড়ি থেকে আসে। সারাদিন স্কুলে তেমন কিছুই খায় না। ছুটির পরে বাড়ি ফিরতে দেরি হলেই ওরা খিদেয় কাতরাতে থাকে। ততক্ষণে ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলি বারবার জিজ্ঞেজ করছে, ‘‘কাকু কখন বাড়ি যাব?’’ কেউ বলছে, ‘‘কাকু খিয়ে পেয়েছে!’’ কী যে উত্তর দেব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফোনে সবটা জানালাম, ওরাও নিরুপায়। চড়া রোদে অপেক্ষার প্রায় দেড় ঘণ্টা হতে চলল। বাচ্চাগুলোর মুখ শুকিয়ে গিয়েছে।
কতক্ষণ বসে থাকা যায়। পাশের একটি দোকানে গিয়ে সবে চায়ের পেয়ালা নিয়ে মুখে তুলতে যাব, তখনই মনে হল, বাচ্চাগুলোর হাতে তো পয়সা নেই। কিছু কিনেও খেতে পারবে না। পকেট হাতড়ে দু’টো একশো টাকার নোট পেলাম। তাই দিয়েই চিপস আর কিছু চকোলেট কিনে বাচ্চাগুলোকে দিলাম। তাতে খিদে মিটবে সামান্যই! কিন্তু পেটে তো কিছু অন্তত পড়বে। তবে তা দিয়ে আর কতক্ষণ চলবে?
এগিয়ে গিয়ে এক পুলিশ কর্মীকে অনুরোধ করলাম। পড়ুয়াদের কথা ভেবে স্কুলবাসগুলো ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধও করলাম। তার জবাবে ওই পুলিশ কর্মীর সটান বলল, ‘‘সাহেবরা মিছিলে হাঁটবেন। তা শেষ হওয়ার আগে একটা গাড়িও ছাড়তে পারব না।’’ উত্তর শুনে ভারী দুঃখ পেলাম। এমন মিছিল হিলকার্ট রোডে করলে এতটা দুর্ভোগ হতো না। প্রচারও বেশি হতো। জনবসতিহীন, ফাঁকা জাতীয় সড়কে কাকে সচেতন করা হল কে জানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy