Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in North Bengal

গ্রামে ঢুকতে বাধা, রাস্তায় কাটছে দিন

৬৬ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম ক্ষুদিরাম মহালি। ওই চা বাগানেই তাঁর জন্ম, কর্ম। সাত বছর বয়সে ছেলে শুক্রা অসুখে ভুগে মারা গিয়েছে।

অসহায়: ক্ষুদিরাম মহালি। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: ক্ষুদিরাম মহালি। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৭:২২
Share: Save:

করোনা আক্রান্ত, এমন গুজব ছড়িয়ে এক বৃদ্ধকে গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি উপকন্ঠে ফাঁসিদেওয়া ব্লকে গঙ্গারাম চা বাগানের মুন্নি ডিভিশনের ঘটনা।

৬৬ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম ক্ষুদিরাম মহালি। ওই চা বাগানেই তাঁর জন্ম, কর্ম। সাত বছর বয়সে ছেলে শুক্রা অসুখে ভুগে মারা গিয়েছে। পরে স্ত্রী তুলসিও মারা যান। চা বাগানের কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর বাগানের ঘর ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু বাগানের মায়া ছাড়তে পারেননি। তখন থেকে ভাইপো অজাদের বাড়িতেই থাকতেন। মাটিগাড়া, চম্পাসারিতে ঘুরে ঘুরে দিনমজুরি করতেন। কাজের সুবাদে ওই সব এলাকায় পরিচিতদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে থাকতেন। করোনা আবহে তাঁরা বাড়ি চলে যেতে বলেন। তখন বাগানে গিয়ে থাকাই নিরাপদ হবে মনে করে সম্প্রতি ভাইপোর কাছে যান মাস দেড়েক আগে। সে সময় কোয়রান্টিনে রাখাও হয়। তারপরেও তাঁকে গ্রামে থাকতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, ভাইপো রাখতে চাইলেও মুন্নি ডিভিশনের লোকজন বাধা দিচ্ছে। তাঁদের সাফ কথা ক্ষুদিরাম বাইরে থেকে এসেছে, করোনা আক্রান্ত, গ্রামে রোগ ছড়াবে। সপ্তাহখানেক আগেও গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাসিন্দাদের একাংশ ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। থাকার জায়গা না পেয়ে এই বয়সে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। শিবমন্দির এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের অংশে ‘সাবওয়ে’-র ফুটপাতে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁর।

ক্ষুদিরামের দাবি, ‘‘আমার করোনা হয়নি। অথচ এলাকার লোক মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাগানে থাকতে দিতে চাইছে না। গেলেই তাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রশাসন আমাকে বাগানে ফেরানোর ব্যবস্থা করলে বাঁচতে পারব।’’ মুন্নি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় নেতা লক্ষ্মণ হালদার জানান, মাস দেড়েক আগে যখন ক্ষুদিরাম এসেছিলেন কখন কলকাতা ফেরত গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কোয়রান্টিনেও ছিলেন। ওঁদের সঙ্গে মিশেছে বলে তাঁকে গ্রামের কিছু লোকজন আলাদা থাকতে বলে। না হলে চলে যেতে বলা হয়। লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘এর মধ্যে গ্রামে এসেছে বলে জানা নেই। তবে মানুষকে বোঝাব।’’

মাস দেড়েক আগে গ্রাম থেকে ফিরে আঠারোখাইয়ের চৈতন্যপুরে একজনের বাড়িতে ছিলেন। তিনি বাইরে যাবেন বলে সপ্তাখানেক আগে ক্ষুদিরামকে চলে যেতে বলেন। এরপর রাস্তার ধারে বৃদ্ধকে দেখে নজরে পড়ে কয়েকজনের। আইনি পরিষেবা প্রদানকারী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঘটনাটি জেনে মাটিগাড়া ব্লক অফিসে খবর দেয়। মঙ্গলবার বৃদ্ধকে মাটিগাড়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক দেখানো হয়। ফাঁসিদেওয়ার বিডিও সঞ্জু গুহ বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। ওই বৃদ্ধকে প্রয়োজনে কিছুদিন সরকারি কোয়রান্টিনে রেখে যাতে গ্রামে ফেরানো যায় তা দেখা হচ্ছে।’’ মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কাজল ঘোষ জানান, বৃদ্ধের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কমর্কর্তা অমিত সরকার বলেন, ‘‘এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরাও চেষ্টা করছি ওঁকে গ্রামে ফেরানোর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in North Bengal Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE