Advertisement
E-Paper

শীতের রাতে ঘুম ভেঙে যায় গুলির শব্দে

বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, গরু পাচারের জন্যই এই নিত্য হট্টগোল। সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ধরাও পড়ে দু-চারশো গরু। কিন্তু, নিয়মিত শয়ে-শয়ে গরু পাচারও হচ্ছে বলে সন্দেহ গ্রামবাসীদেরই।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯

কখনও বোমার আওয়াজে দরজা-জানালা নড়ে যায়। কোনও দিন গুলির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। কখনও ‘হুলা’র শব্দে জেগে উঠতে হয়। কোচবিহারের বেশ কিছু সীমান্ত গ্রামে শীতকালে রাত গভীর হলেই বেড়ে যায় হইহল্লা। বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, গরু পাচারের জন্যই এই নিত্য হট্টগোল। সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ধরাও পড়ে দু-চারশো গরু। কিন্তু, নিয়মিত শয়ে-শয়ে গরু পাচারও হচ্ছে বলে সন্দেহ গ্রামবাসীদেরই।

দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, চ্যাংরাবান্ধার সীমান্ত গ্রামের অনেক বাসিন্দাই একান্তে বলেছেন, ‘‘মাঝরাতে গুলি, বোমা, হইহল্লা শুনতে পাই প্রায় রোজই।’’ তাঁদের অভিজ্ঞতা, শীতের কুয়াশার সুযোগে গরু পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে যায়। তাঁরাই জানাচ্ছেন, কয়েক জন মাত্র বিএসএফ রক্ষী খোলা সীমান্তে এক সঙ্গে ৫০-৬০ জনের মোকাবিলা করতে পারেন না। তাই বিএসএফ হয়তো শূন্যে গুলি চালিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে বলে ধারণা ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের। কিন্তু বিএসএফ একদিকে যখন গুলি চালাচ্ছে, অন্য দিক দিয়ে গরু পাচার চলছে, এমন ঘটনার কথাও শোনা যায় সীমান্ত-গ্রামের বাসিন্দাদেরই মুখে। শালমারা এলাকার এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘বিএসএফের সঙ্গে গরু পাচারকারীদের লুকোচুরি চলে সারা বছরই। শীতে বেড়ে যায়।’’

বস্তুত, বিএসএফের একাংশও মানছেন, ঘন কুয়াশার সময়ে সীমান্তের কাঁটাতারহীন এলাকায় নজরদারি দিতে সমস্যা বাড়ে। কারণ, কোচবিহার জেলার ৫৪৯ কিলোমিটার সীমান্তের প্রায় ১০০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নেই। দিনহাটা প্রায় ১৫০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সেখানে নাজিরহাট, সিতাই, গীতালদহের মতো এলাকায় উন্মুক্ত সীমান্ত আছে। আবার নদী দু’দেশকে ভাগ করেছে এমন এলাকাও রয়েছে। সেই ঘন কুয়াশায় নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে গরুগুলিকে তাড়িয়ে ওপারে রওনা করিয়ে দিলেই কাজ অনেকটা হয়ে যায়। জিরো পয়েন্টের পরে বাংলাদেশের দিক থেকে চোরাকারবারিদের লোকজন পৌঁছে গরু নিয়ে যায়। গ্রামবাসীদের একাংশের হিসেব অনুযায়ী, চোরাপথে সীমান্ত পেরোনো দালালদের মারফত ফি মাসে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়।

সম্প্রতি কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ডিআইজিকে নজরদারি বাড়াতে অনুরোধ করেছেন। পঞ্চায়েতও এলাকার বাসিন্দাদের পাচারকারীদের মদত দিতে নিষেধ করেছে। পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “বেআইনি ভাবে গরু নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

বিএসএফের কোচবিহার ইউনিটের দাবি, ডিসেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারির মধ্যে ৬০০টি বেশি গরু আটক করা হয়েছে। বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের ডিআইজি সিএল বেলওয়া বলেন, “কুয়াশার সুযোগ নিয়ে পাচারের চেষ্টা অনেকবারই ব্যর্থ করে দিয়েছি। গরু আটক করা হয়েছে বহু জায়গায়।”

(চলবে)

(সহ প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ, অরিন্দম সাহা)

Cow Trafficking Winter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy