Advertisement
E-Paper

ধস-আতঙ্কে কাঁপছে দার্জিলিংও

সকাল ৬টায় যে রাস্তা খোলা, বেলা ৯টায় সেই রাস্তা ধসে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে এমনই ঘটছে দার্জিলিং পাহাড়ে। ফি বর্ষায় ধস হয়। বাসিন্দাদের অনেকেরই মনে হচ্ছে, এবার যেন একটু বেশি ধস নামছে। হুড়মুড়িয়ে ধসের আতঙ্কে কাঁপছে দার্জিলিং। জনজীবন কিছুটা যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বুধবার রাস্তাঘাট খুবই বেহাল ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাস্তা খোলে।

সংগ্রাম সিংহ রায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:০১
দার্জিলিঙের পথে নিমকিদারায় ধসে ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

দার্জিলিঙের পথে নিমকিদারায় ধসে ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

সকাল ৬টায় যে রাস্তা খোলা, বেলা ৯টায় সেই রাস্তা ধসে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে এমনই ঘটছে দার্জিলিং পাহাড়ে। ফি বর্ষায় ধস হয়। বাসিন্দাদের অনেকেরই মনে হচ্ছে, এবার যেন একটু বেশি ধস নামছে। হুড়মুড়িয়ে ধসের আতঙ্কে কাঁপছে দার্জিলিং। জনজীবন কিছুটা যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বুধবার রাস্তাঘাট খুবই বেহাল ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাস্তা খোলে। তাতে পাহাড় থেকে কাতারে কাতারে পর্যটক বোঝাই গাড়ি সমতলে নেমেছে।
যাঁরা লম্বা ট্যুরে গিয়েছেন বা ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে গিয়েছেন, তেমন গুটিকয় পর্যটক ছাড়া নতুন করে পর্যটকদের পাহাড়ে উঠতে দেখা যায়নি। ম্যাল, চৌরাস্তা, চকবাজারে ছিল না চেনা ভিড়। দু’একটা উদ্বিগ্ন মুখকে ইতিউতি ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। দার্জিলিং থেকে টয়ট্রেন চলেনি, সামনেই নিমকিদাড়ায় রেললাইনের উপরে পড়া ধস এদিনও সরানো সম্ভব হয়নি। কাজ চলছে। তবে কবে সরানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা দিতে পারেননি জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গা মিরিক, দার্জিলিং, গ্যাংটক, পেলিং, নামচি, ছাঙ্গু, কালিম্পং থেকে এক সঙ্গে গাড়িগুলো নামতে শুরু করার ফলে সারা দিনই যানজটে ভোগান্তি হয়েছে সাধারণ মানুষের। এদিন ধসে বিধ্বস্ত এলাকা দেখতে ও ত্রাণ দিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, দার্জিলিংয়ের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। ফলে ভিআইপিদের জায়গা করে দিতে গিয়ে যানজট যন্ত্রণা আরও বেড়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘পাহাড়ের সমস্ত জায়গায় কোথাও পূর্ত দফতর, কোথাও বিআরও কোথাও সেনাবাহিনী মিলে ধস সরানোর কাজে হাত দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বৃষ্টি না থামায় ও নতুন করে ধস নামায় কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার।’’

দার্জিলিং, গ্যাংটক যাওয়ার মূল সড়কগুলি ধসে বন্ধ ছিল প্রায় দু’দিন। সারা দিনই দার্জিলিং থেকে বিভিন্ন বাইপাসের মতো ছোট পাহাড়ি চোরাপথ দিয়ে ঘুরে নেমেছে গাড়ি। কালিম্পং যেতে ঘুম হয়ে ঘুরে যেতে হয়েছে। গ্যাংটক যেতে হয়েছে তিস্তাবাজার থেকে পেশকের রাস্তা ধরে জোরবাংলো হয়ে। ফলে রাস্তাগুলিতে ছিল লম্বা যানজট। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে মোটামুটি আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগে। এদিন সেটাই ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লেগেছে। কখনও ধস সরিয়ে সামান্য গাড়ি চলাচলের মতো রাস্তা করা হয়েছে, আবার হয়ত একই জায়গায় ধস নেমেছে। সমস্ত পাহাড়ি রাস্তায় এদিনও নতুন করে ছোট ছোট ধস দেখা গিয়েছে। সকালে নিমতিঝোরা, শ্বেতীখোলা, রক্তিখোলা এলাকায় ঘন্টায় ঘন্টায় রাস্তা আটকে ধস সরানো চলেছে পুরোদমে।

সুনসান দার্জিলিং। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তবে পাহাড়ের চেনা উদ্যম ও প্রাণোচ্ছ্বলতা ছিল অনুপস্থিত। কলকাতার রামজি প্রসাদের পরিবার দার্জিলিংয়ে এসেছিলেন, যেদিন ধস নেমেছে তার আগের দিন বিকেলে। বিভিন্ন জায়গায় ধস নামার ফলে তাঁদের সফরসূচিতে কাটছাঁট করতে হয়েছে। তাঁদের ছুটির আরও দুদিন রয়েছে। আশা করছেন তার আগে অবস্থা স্বাভাবিক হবে। এদিন তাঁদের দেখা গেল পরিবার নিয়ে দার্জিলিং স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা টয়ট্রেনের সামনেই বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলে রাখতে। বললেন, ‘‘দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্য টয়ট্রেন। পাহাড় ছাড়তে হচ্ছে বলে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বিপদ মাথায় নিয়ে থাকা যায়!’’

পঞ্জাবের একটি পরিবার গ্যাংটক হয়ে দার্জিলিং এসেছেন এদিনই। তাঁরা দু’দিন এখানে থেকে বাগডোগরা থেকে শনিবার বিমান ধরবেন বলে জানালেন। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁরাও মনমরা হয়ে ম্যালের এক কোণে বসেছিলেন। পরিবারের কর্তা সুধীন্দ্র সিংহ প্লাহা বলেন, ‘‘দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে আরও দু’এক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বিপদের আশঙ্কা থাকায় কাটছাঁট করতে হয়েছে।’’ তাঁদের অপারেটর তাঁকে দার্জিলিংয়ের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে দেখাবেন বলেছেন।

darjeeling landslide sangram singha roy gangtok kalimpong siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy