Advertisement
০২ মে ২০২৪

জলের নামে বেআইনি মদ

দোকানে টিমটিম করে আলো জ্বলছে। সামনে সাজানো রকমারি তেলেভাজা। চাইলেই দোকানি কাগজে মুড়ে তেলেভাজা এগিয়ে দিচ্ছেন। সেটা খাওয়ার পরে মুচকি হেসে খদ্দেরের আব্দার, ‘স্টিলের গ্লাসে জল দিন’।

বেআইনি মদ

বেআইনি মদ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

দোকানে টিমটিম করে আলো জ্বলছে। সামনে সাজানো রকমারি তেলেভাজা। চাইলেই দোকানি কাগজে মুড়ে তেলেভাজা এগিয়ে দিচ্ছেন। সেটা খাওয়ার পরে মুচকি হেসে খদ্দেরের আব্দার, ‘স্টিলের গ্লাসে জল দিন’। চলে এল স্টিলের গ্লাসে ‘জল’। চুমুকে চুমুকে সেই ‘জল’ শেষ করলেন খদ্দের। তত ক্ষণে দোকানির হাতে কুড়ি টাকার নোট। তেলেভাজা ৫ টাকা, আর ‘জল’ ১৫ টাকা!

এই দোকান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় পড়ে না। এখানে আবগারি লাইসেন্সের কোনও বালাই নেই। শুধু ছোট্ট ইঙ্গিত, সঙ্গে সঙ্গে হাতেহাতে জল।

এ ভাবেই ধাবায় ধাবায় দেদার বেআইনি মদ বিকোচ্ছে কোচবিহার জেলা জুড়ে। আর এই নজরদারিহীন দোকান থেকে সেই মদ সহজেই চলে যাচ্ছে ২১ বছরের কম বয়সীদের হাতে। যদি দোকানে না আসতে চান, তা হলেও সমস্যা নেই। মোবাইলে একটা ফোন করলেই বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে পাউচ। আবার সন্ধ্যা নামলেই জ্যারিকেন হাতে নেমে পড়ছেন বিক্রেতা। যার দরকার, তাকে শুধু জানতে হবে সুলুকসন্ধান।

কোচবিহারের এই বেআইনি মদের কারবার নিয়ে এখন যথেষ্ট চিন্তিত পুলিশ, প্রশাসন, আবগারি দফতর। বিশেষ করে কলকাতার বালিগঞ্জে আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর পরে প্রশাসনের তরফে কড়াকড়ি করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র। কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সংগঠনের সভাপতি রাজু রায় পর্যন্ত বলেছেন, “আবেশ কাণ্ডের পরেও বেআইনি মদ কারবারিদের দৌরাত্ম্য কমেনি।” রাজ্য পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে কয়েকটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জেলার প্রশাসনকে। সেই মতো আজ, শুক্রবার লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন কোচবিহার জেলা আবগারি দফতরের কর্তারা। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য, বেআইনি মদের কারবারে রাশ টানা এবং ২১ বছরের কম বয়সীদের কাছে মদ বিক্রি বন্ধ করা।

আবগারি দফতরের কোচবিহারের অতিরিক্ত সুপার নিলয় সাহার বক্তব্য, “২১ বছরের কম বয়েসীদের কাছে মদ বিক্রি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত সমস্ত দোকানকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে অনুরোধ করা হবে ওই বৈঠকে।’’ কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “প্রতি সপ্তাহেই আমরা আচমকা অভিযান চালাচ্ছি। গত দুই সপ্তাহে আড়াইশো লিটার বেআইনি মদ উদ্ধার করে নষ্ট করা হয়।” কোচবিহার জেলা লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদ ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা গৌতম সাহা বলেন, “সব দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে আমাদের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। ৪ অগস্ট সাংগঠনিক বৈঠকে এ সব নিয়ে পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা হবে।”

আবগারি দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, এখানে সমস্যা দুটো। প্রথমত, বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি করলে রাজকোষে টাকা আসবে না। ভুটান ও অসম থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে মদ কিনে কোচবিহারে সর্বত্র তা বিক্রি করা হয় বলে জেলা জুড়ে অভিযোগ। হোটেল, ধাবা বা দোকান এই মদ কেনে বেশি মুনাফার লোভে। তাতে আবগারি দফতরের ক্ষতির পরিমাণ বাড়তেই থাকে। দ্বিতীয়ত, এমন লাগামছাড়া ভাবে মদ বিক্রি হলে কম বয়সীরা তা চট করে হাতে পেয়ে যাবে। ফলে আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা এখানে ঘটাও অসম্ভব নয়।

পুলিশ ও আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারেও তুফানগঞ্জ থানা এলাকার নাককাটিগছের বড়াইতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেআইনি ভাবে বিক্রি করতে চাওয়া ৩৫ লিটার বিয়ার, ৮৪ লিটার দেশি মদ ও ১৬ লিটার বিদেশি মদ উদ্ধার করেছেন আবগারি দফতরের কর্মীরা। বিভিন্ন ধাবা এবং ফোন করলেই মদ পৌঁছে দেওয়ার কারবারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Liquor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE