নজর নেই। অসমাপ্ত মাঠের দেওয়ালে ঠাঁই হয়েছে ঘুঁটের। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
নামটাই শুধু পাল্টে গিয়েছে। মাঠ পাল্টায়নি। হলের মাঠ এখন সংহতি ময়দান। চরিত্রেও বদল আসেনি এতটুকুও। ওই মাঠেই খেলার আসর বসে। ওই মাঠেই মেলা। ওই মাঠেই রাজনৈতিক দলগুলির সভা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ দিনহাটার বাসিন্দারা।
শহরের মানুষ দাবি তুলেছিলেন একটি স্টেডিয়াম তৈরির। যা কিনা ব্যবহার হবে শুধুমাত্র খেলার স্বার্থেই। দুই দশক আগে ওই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য যুব কল্যাণ দফতরের সহযোগিতায় মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ছয় একর জমি কেনা হয় শহর সংলগ্ন পুঁটিমারি এলাকায়। রাজ্যসভার এক সাংসদের দেওয়া পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু হয় মাঠের চারদিকে পাঁচিল দেওয়ার কাজ। অর্ধেক পাঁচিল দেওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই কাজ। যা শুরু হয়নি আজও। পাঁচিল ধসে পড়ে চুরি হয়ে গিয়েছে অনেক ইট। তা নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই দিনহাটার বাসিন্দাদের।
তাঁদের বক্তব্য, এই শহরে কমল গুহের মতো নেতা দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। দীর্ঘদিন মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। এখন তাঁর ছেলে উদয়ন গুহ দিনহাটার বিধায়ক। এই শহর থেকেই উত্তরবঙ্গে প্রথম বিধানসভা আসন জেতে তৃণমূল। কিন্তু কেউই স্টেডিয়াম তৈরির ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাননি। দিনহাটা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিভুরঞ্জন সাহা বলেন, “ এ কথা অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই যে স্টেডিয়াম খেলার আঁতুড়ঘর। আমরা সেটাই পায়নি। বহু চেষ্টা করেছি। বহু আবেদন করেছি। পরবর্তীতে কেউ আর কোনও টাকা বরাদ্দ করল না। তাই আমাদের আশাও পূর্ণ হল না।”
খেলোয়াড়দের অনেকেই অভিযোগ করেন, স্টেডিয়াম না থাকার জন্য খেলার সরঞ্জাম রাখার জায়গা নেই। কোনও খেলায় অংশ নেওয়ার পর কারও শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তাঁকে অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়। একমাত্র মাঠ হিসেবে সংহতি ময়দানে শুধু মেলা আর সভাই নয়, রাতের অন্ধকারে বসে মদের আসরও। মাঠে খেলতে নেমে অনেকেই বোতলের ভাঙা কাঁচে জখম হয়েছেন। তাই স্টেডিয়াম তৈরির দাবি জোরাল হচ্ছে প্রতিদিন। পাশাপাশি দিনহাটায় এখন সাঁতার, খো খো, টেবিল টেনিস খেলার প্রতিও আগ্রহ বেড়েছে। সে কথা ভেবে একটি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরির দাবিতেও সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
কিন্তু কেন গড়ে তোলা যায়নি একটি স্টেডিয়াম? দিনহাটার বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক বাম নেতা উদয়ন গুহ বলেন, “স্টেডিয়ামের জন্য জায়গা কেনা হয়েছে বহু আগেই। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তো লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ওই স্টেডিয়াম গড়বে বলে বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই দেখিনা।” তৃণমূলের অবশ্য দাবি, বামেদের মনোভাবই পিছিয়ে দিয়েছে দিনহাটাকে। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, যে জায়গা থেকে জিতে বহু বছর বাম মন্ত্রী সভায় কৃষি মন্ত্রী থাকলেন কমল গুহ কেন তিনি সেখানে একটি স্টেডিয়াম তৈরি করতে পারলেন না? তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বাম আমলে কেন স্টেডিয়াম তৈরি করা গেল না তা নিয়ে আগে বক্তব্য দিন উদয়নবাবুরা। তার পরে না হয় অন্য কথা বলবেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দিনহাটায় একটি স্টেডিয়াম করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। ওই স্টেডিয়ামের কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে।”
এই টানাপড়েনে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শহরের খেলাপ্রেমী মানুষদের মধ্যে। তবুও তাঁরা স্বপ্ন দেখা ছাড়ছেন না। অনেকেই বলেন, “একদিন স্টেডিয়াম পাব আমরা। সব খেলাতেই দিনহাটা থেকে প্রতিভাবানরা উঠে আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy