Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

খেলাকে ঘিরে এগোনোর স্বপ্ন দিনহাটার

কেউ এশিয়া সেরা হয়ে জিতে এনেছেন সোনা। কেউ ভারত সেরা হয়ে জয় করেছেন মিস্টার ইন্ডিয়ার শিরোপা। বছরের পর বছর এই ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেই দিনহাটার এখন অন্য পরিচয় দেহসৌষ্ঠবের শহর। তখন ষাটের দশক। দেহসৌষ্ঠব ঘিরে শহর থেকে গ্রামে চলছে এক অন্য ঊদ্মাদনা । ছোট ছোট ক্লাব কে ভিত্তি করে শরীরচর্চা শুরু করছেন তরুণরা। সেই সময়ই মহামায়াপাট ঘেঁষে গড়ে ওঠে এক ছোট্ট ব্যায়াম বিদ্যালয়।

এখানেই হওয়ার কথা ছিল স্টেডিয়াম। অসমাপ্ত এই স্টেডিয়াম এখন গরু চরানো, ধান রোদে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

এখানেই হওয়ার কথা ছিল স্টেডিয়াম। অসমাপ্ত এই স্টেডিয়াম এখন গরু চরানো, ধান রোদে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নমিতেশ ঘোষ
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০২:২৪
Share: Save:

কেউ এশিয়া সেরা হয়ে জিতে এনেছেন সোনা। কেউ ভারত সেরা হয়ে জয় করেছেন মিস্টার ইন্ডিয়ার শিরোপা। বছরের পর বছর এই ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেই দিনহাটার এখন অন্য পরিচয় দেহসৌষ্ঠবের শহর।

তখন ষাটের দশক। দেহসৌষ্ঠব ঘিরে শহর থেকে গ্রামে চলছে এক অন্য ঊদ্মাদনা । ছোট ছোট ক্লাব কে ভিত্তি করে শরীরচর্চা শুরু করছেন তরুণরা। সেই সময়ই মহামায়াপাট ঘেঁষে গড়ে ওঠে এক ছোট্ট ব্যায়াম বিদ্যালয়। পঞ্চাশ বছর পরে সেই বিদ্যালয়ই এখন একটি মহীরুহ। এখান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে একের পর এক প্রতিযোগিতার আসর মাত করে দিয়েছেন প্রতিযোগীরা। ২০০৫ সালে এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল থেকে পাওয়ার লিফটিং এ সোনা জিতে আনেন খাগড়াবাড়ির বাসিন্দা ব্যায়াম বিদ্যালয়ের ছাত্রী চন্দনা দাস। গত বছর পাওয়ার লিফটিং এ মিস্টার ইন্ডিয়ার খেতাব জেতেন অয়ন দত্ত। শুধু এই দুই বিভাগই নয়, প্রতিবছর বডি বিল্ডিং থেকে যোগাসন, সব প্রতিযোগিতাতেই পুরস্কারের ঝুলি ভরে ওঠে দিনহাটার। এবারই বারাসতে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বিভাগে তৃতীয় হয়েছে ব্যায়াম বিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবযানী রায়।

ব্যায়াম বিদ্যালয়ের কর্তা তথা প্রশিক্ষক বিভুরঞ্জন সাহা বলেন, “শরীরচর্চায় দিনহাটার আগ্রহ সেই আদ্যিকাল থেকে। আমরা যখন সদ্য তরুণ, চারদিকের ওই প্রবণতা দেখে চুপ করে থাকতে পারিনি। ক্লাবে যোগ দিয়েছি। প্রশিক্ষণও নিয়েছি। এখনও তা চলছে। আমরা খুশি যে বাইরের বহু মানুষ দেহসৌষ্ঠবের নামেই এখনও দিনহাটাকে জানতে পারছে।” বিভুবাবু নিজেও একাধিক জাতীয় প্রতিজোগিতায় সেরার শিরোপা পেয়েছেন। মিস্টার ইন্ডিয়ার খেতাবও জিতেছেন। তিনি এখন দিনহাটা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন। তাঁর দাবি, দেহসৌষ্ঠব নিয়ে সরকারি উদ্যোগেও দিনহাটায় শিবির হওয়া উচিত। যে সমস্ত খেলোয়াড়রা আর্থিক ভাবে দুর্বল তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত প্রশাসনের।

দেহসৌষ্ঠবেও এগিয়ে গেলেও, ফুটবল, ক্রিকেটে কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে দিনহাটা। একটা সময় ছিল, যখন ফুটবল নিয়েও উন্মাদনা ছিল দিনহাটা শহরে। একাধিক ক্লাবের ফুটবলের দল ছিল। যেদিন ফুটবল ম্যাচ থাকত সেদিন যেন ধর্মঘটের ছবি দেখা যেত শহর জুড়ে। পথেঘাটে যানবাহন নেই, দোকানপাট বন্ধ। এমনকি অনেকে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিনভর বসে থাকতেন ফুটবল মাঠে।

এই শহর থেকেই উঠে এসেছেন পুনু বসু থেকে শুরু করে অজয় রায়, বিজয় রায় সহ অনেক প্রথম সারির খেলোয়াড়। পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কমল গুহ, বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হোসেন মহম্মদ এরশাদও ফুটবল খেলতে নেমেছেন দিনহাটার মাঠে। জাতীয় স্তরের ফুটবল খেলায় অংশ নিয়েছেন দিনহাটার অনেক ফুটবলার। ক্রিকেটেও আগ্রহী এ শহর। পাড়ায় পাড়ায় চলত ক্রিকেট খেলা। অ্যাথলেটিক্সেও দিনহাটার নাম উজ্জ্বল করেছেন অনেকেই। ষাটোর্ধব চন্দন সেনগুপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে আমেদাবাদ, কালিকট, বেনারস পর্যন্ত গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। পরে রেলের কর্মী হন তিনি। অল ইন্ডিয়া রেল মিটে আটবার অংশ নিয়েছেন। গত পনেরো বছর ধরে দিনহাটা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলিট দল দলগত বিভাগে জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে।

অভিযোগ, ভাল মাঠ নেই দিনহাটায়। নেই কোনও স্টেডিয়াম। পরিকাঠামোর অভাবের জন্যেই সম্ভাবনা থাকা সত্বেও অনেক খেলাতে পিছিয়ে পড়ছে দিনহাটা। চন্দনবাবুর আক্ষেপ, “সেই সময়ের স্পিরিট টা এখন সেভাবে দেখতে পাওয়া যায় না। আসলে সব কিছুর জন্য একটা পরিকাঠামো দরকার। সেটার অভাব রয়েছে। সেদিকটায় সকলের নজর দেওয়া উচিত।”

মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিভুরঞ্জনবাবুও সে কথা স্বীকার করেন। তাঁর মতে, সময়ের সঙ্গেই বদলে যায় চাহিদা। সে সময় যে অবস্থায় খেলা সম্ভব হত তা আজ আর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “সময় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলাধূলার ক্ষেত্রে দিনহাটাকে আমরা পাল্টাতে পারিনি। তাই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু খেলায় পিছিয়ে পড়েছি এটা ঠিক।” তবে হাল ছাড়াতে রাজি নন কেউ। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার তরফে প্রতি বছর নিয়ম করে ফুটবল লিগ, ক্রিকেট লিগ চালানো হচ্ছে। সেখান থেকে তুলে আনার চেষ্টা হচ্ছে খেলোয়াড়দের।

দেহসৌষ্ঠবকে সামনে রেখে অন্য ক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতাকেও হার মানাতে শপথ নিচ্ছে শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE