রঘু সাহা। —নিজস্ব চিত্র।
রোজই সকালে আমি ফুল আর দুধ দিতে যাই আমাদের ইটভাটার মালিক রামরতন অগ্রবালের বাড়ি। ইংরেজবাজার শহরের সুকান্ত মোড় পেরিয়ে বিবেকানন্দ পল্লিতে ঢোকার মুখেই রামরতনবাবুর দোতলা বাড়ি। তার পাশেই তাঁর দুই ভাই রামকৃষ্ণ ও রামলক্ষ্মণ অগ্রবালের বাড়ি। রামরতনবাবুর অনেক ব্যবসা। তার মধ্যে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরের ইটভাটাও রয়েছে। আমি ওই ইটভাটায় বছর খানেক ধরে শ্রমিকের কাজ করছি। ইটভাটাতে একটি ফুলের বাগান রয়েছে। সেখানে প্রচুর ফুল ফোটে। মালিক রামরতনবাবু আমাদের বলতেন, বাড়িতে ফুল ও দুধ দিয়ে আসতে। ভাটার শ্রমিকেরা যে যখন ফাঁকা থাকতেন, ফুল ও দুধ দিতে আসতেন শহরের বিবেকানন্দ পল্লিতে। তবে আমিই অধিকাংশ দিন আসতাম।
এদিন সকাল পৌনে আটটা নাগাদ তেমনই সাইকেলে করে মালিকের বাড়ি আসি। দেখি বাড়ির গ্যারাজের দরজা খোলা রয়েছে। দরজা ঠেকানো থাকেই রোজদিন। আমি গ্যারাজের কাছে ফুল ও দুধ দিয়ে চলে যাই। এ দিন গ্যারেজে ঢুকতেই দেখি রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। তারপরে দেখি ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় এক ব্যক্তি উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। আমি বুঝতে পারিনি উনিই আমাদের মালিক রামরতনবাবু। অবস্থা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। রামরতনবাবুর দুই ভাইকে তাঁদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসি। তারপরে তাঁদের সঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখি মালিক রামরতনবাবুর পাশে গাড়ির নীচে পড়ে রয়েছে পরিচারক গণেশের দেহ। বাড়ির দোতলায় সিঁড়ি ঘরে পড়ে রয়েছে মালিকের স্ত্রীর দেহ। মালিকের স্ত্রী এবং পরিচারকের দেহে চাদর দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে রামরতন বাবুকে ঢেকে রাখা হয়নি। তাঁর চোখের চশমাও পড়ে রয়েছে।
কেন যে এমন হল, কেউ জানেন না। রামরতনবাবু যত দূর জানি, অনেক দিন ধরেই এই শহরে রয়েছেন। তিনি অনেক রকমেরই ব্যবসা করেন। তাঁর তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সকলেই খুব খুশি ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনওদিন খারাপ কিছু শুনিনি। তিনি আমাদের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করতেন। তাঁর কোনও শত্রু ছিল কি না, জানি না।
এ দিন সকালে ফুল, দুধ হাতে নিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, তা দুঃস্বপ্নেও কখনও ভাবিনি। এমন সকাল যেন জীবনে আর না আসে।
(প্রতিবেদক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy