Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইঙ্গিতেই প্রচার মূক-বধির ঝর্নার

অন্য প্রার্থীদের ভাষণে যখন কান পাতা দায়, তখন কেবল হাতের ইশারায় ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন এক মহিলা। আকার-ইঙ্গিতে নিজের দলীয় প্রতীক, পদ্ম চিহ্ন দেখিয়ে করজোড়ে নমস্কার করছেন। দিনহাটা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী, মূক ও বধির ঝর্না দাস প্রতিবন্ধকতাকে রাজনীতির পথ আটকে দাঁড়াতে দেননি।

স্পর্শে আশ্বাস। দিনহাটায় ভোট প্রচারে ঝর্না দাস। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

স্পর্শে আশ্বাস। দিনহাটায় ভোট প্রচারে ঝর্না দাস। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

অরিন্দম সাহা
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৪
Share: Save:

অন্য প্রার্থীদের ভাষণে যখন কান পাতা দায়, তখন কেবল হাতের ইশারায় ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন এক মহিলা। আকার-ইঙ্গিতে নিজের দলীয় প্রতীক, পদ্ম চিহ্ন দেখিয়ে করজোড়ে নমস্কার করছেন। দিনহাটা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী, মূক ও বধির ঝর্না দাস প্রতিবন্ধকতাকে রাজনীতির পথ আটকে দাঁড়াতে দেননি।

ভোটের ফল যা-ই হোক, ঝর্নাদেবী গোটা রাজ্যের কাছে দিনহাটার নয়াপাড়ার ভোটকে একটি বিশিষ্ট জায়গা করে দিয়েছেন। ভোটের ময়দানে তাঁর লড়াই হয়ে উঠেছে নজরকাড়া। বিজেপির দিনহাটা শহর কমিটির সভাপতি প্রবীর দে বলেন, “ঝর্না গোটা রাজ্যে দৃষ্টান্ত।”

দিনহাটা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড বরাবর বামেদের শক্ত ঘাঁটি। গত পুরসভা ভোটেও ওই আসনে বড় ব্যবধানে জেতে ফরওয়ার্ড ব্লক। ঝর্নার স্বামী, পেশায় গৃহশিক্ষক, যুব লিগের নেতা হিমাংশু দাস তখন ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে প্রচার করেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। মহিলা-সংরক্ষিত আসনে ঝর্নাকে প্রার্থী করে দল।

এবার স্ত্রীর হয়ে প্রচারে কোমর বেঁধে নেমেছেন বিজেপির দিনহাটা শহর কমিটির সদস্য হিমাংশুবাবু। হিমাংশুবাবুর দাবি, “স্ত্রী জন্ম থেকে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু ওঁর ইশারা প্রচার ভোটারদের মন স্পর্শ করে যাচ্ছে।’’ প্রতিবন্ধীরাও সুযোগ পেলে পিছিয়ে থাকে না, সেটা প্রমাণের একটা সুযোগ চাইছেন বলে দাবি করেন হিমাংশুবাবু।

বছর ছত্রিশের ঝর্নাদেবী একা হাতে সংসারের কাজকর্ম সামলান। বড় ছেলে বিক্রম দ্বাদশ শ্রেণি, ছোট ছেলে বীরেশ্বর নবম শ্রেণির পড়ুয়া। রোজ রান্না করে ছেলেদের স্কুলের জন্য তৈরি করে দেন। পাড়ার অনেক বাড়ির পুজো, এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও সাহায্য করেন।

বিরোধীরা অবশ্য ঝর্নার লড়াইকে তেমন আমল দিতে চাইছেন না। ফরওয়ার্ড ব্লকের দিনহাটা জোনাল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিশু ধর বলেন, “সুবিধাবাদী রাজনীতি করতে বামেদের খারাপ সময়ে হিমাংশু দল ছেড়েছে। এবার ভোটের বাজারে স্ত্রীর প্রতিবন্ধকতাকে পুঁজি করে মানুষের সহানূভূতি পেতে চাইছে। যা দেখে মানবিক কারণে নিজেরই কষ্ট হচ্ছে।’’ ওই ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্তি অধিকারী বলেন, “ব্যক্তিগত সহানূভূতি ভোটের বাক্সে প্রভাব ফেলবে না।”

তৃণমূলের দিনহাটা শহর সভাপতি অসীম নন্দী বলেন, “শুধু সহানূভূতি দিয়ে ভোটের লড়াই হয় না। এটা রাজনৈতিক লড়াই।’’ প্রার্থী তনুশ্রী দেবনাথের বক্তব্য, “ব্যক্তিগত সহানূভূতি আদায় আর মানুষের সমস্যা মেটাতে কাজ করা এক নয়।”

দিনহাটার নয়াপাড়ার বাসিন্দা, ঝর্নাদেবীর প্রতিবেশী গৌতম চক্রবর্তী অবশ্য এ সব সমালোচনা উড়িয়ে
দিয়ে বলেন, “কথার দরকার নেই, আমরা কাজ চাই। এত বছর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কখনও ঝর্নাদেবীর সংসার সামলাতে সমস্যা হতে দেখিনি। অন্য দলের প্রার্থী হলেও ওঁকে স্বাগত জানাতাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE