পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের।২০২৩ সালে বৈকুণ্ঠপুরের মহারাজঘাটের ওই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। জঙ্গল-পথে কেন পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ভেবে তৎপর হয় বন দফতর। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উত্তরবঙ্গের জঙ্গল-পথগুলিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথায় কোথায় জঙ্গল-পথ রয়েছে, কোন পথ ধরে কত পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবে, সে সব নিয়ে তৈরি হয়েছে ম্যাপ। কোন জঙ্গল পথে কোন প্রাণীর ভয়, সে সব সমীক্ষা করে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, ‘‘জঙ্গল এলাকায় পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে বন দফতর। আমরা বন দফতরের সঙ্গে আগেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি।’’
বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলিতে জঙ্গল-পথে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে জন্য একাধিক জায়গায় ঐরাবত বাহিনী রাস্তা পাহারায় থাকবে। এ ছাড়া প্রশাসনের সহযোগিতায় যেখানে জঙ্গল-পথ আছে, সেখানে বাসে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে পরীক্ষার্থীদের।’’
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিংম্পিঙ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এই পাঁচ জেলা মূলত জঙ্গল লাগোয়া। তার মধ্যে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে জঙ্গল-পথ অনেক বেশি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ারের
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল ও জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের জঙ্গল ও জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো জন। দার্জিলিং জেলার পঞ্চাশটিরও বেশি স্কুলের কিছু পরীক্ষার্থী জঙ্গল এলাকা থেকে পরীক্ষা দিতে যাবে। শুধু পানিঘাটা রেঞ্জের জঙ্গল ঘেঁষা এলাকায় রয়েছে পাঁচশোর মতো পরীক্ষার্থী। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে যে এলাকায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি সেখানে বাস এবং যেখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম সেখানে ছোট গাড়ির ব্যবস্থা থাকছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্সা ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সব রেঞ্জকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বড়দিঘি, তারঘেরা, ডামডিম, পাথরঝোড়া, মেটেলি ব্লকের ধুপঝোরা, মেটেলি ব্লকের ইনডং, নাগরাকাটা এলাকার বামনডাঙা ইত্যাদি এলাকায় বুনো হাতির আনাগোনা রয়েছে। গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বের রাতে জলপাইগুড়িতে হাতির আক্রমণে এক পরীক্ষার্থীর বাড়ি ঘরের ক্ষতিও হয়েছিল।
কোচবিহারের এডিএফও বিজনকুমার নাথ বলেন, ‘‘কোচবিহারে জঙ্গল লাগোয়া সামান্য কিছু পথ রয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তায় পরীক্ষার দিনে বাড়তি নজরদারি থাকবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)