Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মুজনাই পাড় সংস্কারের কাজে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী গৌতম

ফালাকাটার মুজনাই নদীর নদীর পাড় সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ উদ্বোধন করতে এসে কাজের মান দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। নিজের দফতরের কাজের মান দেখে ক্ষোভ পুষে রাখতে পারেননি তিনি।

মরা মুজনাই নদীর সৌন্দর্যায়ন নিয়ে ক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

মরা মুজনাই নদীর সৌন্দর্যায়ন নিয়ে ক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

ফালাকাটার মুজনাই নদীর নদীর পাড় সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ উদ্বোধন করতে এসে কাজের মান দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। নিজের দফতরের কাজের মান দেখে ক্ষোভ পুষে রাখতে পারেননি তিনি। পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘নদীর পাড় সংস্কার হলেও এই কাজে আমি খুশি নই। লাগোয়া ট্রাক টার্মিনাস সরানো দরকার ছিল। ঘাস ও প্রচুর গাছ রোপণ করা হয়নি। ওই জায়গাটি ঘিরে দেওয়া দরকার ছিল। তা-ও হয়নি।’’ মন্ত্রীর মুখে এই ক্ষোভের কথা শুনে বাসিন্দারা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানালেও অস্বস্তিতে পড়ে যান মঞ্চে বসা ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী সহ প্রশাসনিক কর্তারা। ফালাকাটার বিধায়কের উদ্দেশ্যে গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘ট্রাক টার্মিনাল জন্য আলাদা জমির সন্ধান মিলেছে। টার্মিনাল তৈরি করতে কী প্রয়োজন তা আমায় খুব দ্রুত জানান। আমি পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে অর্থের বরাদ্দ করব। আমার দফতরের থেকে টাকা বরাদ্দ করা হবে।’’

এমনকি, বিধায়ক যাতে বনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নদীর পাড়ের ফাঁকা জায়গাতে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেন সে নির্দেশও তিনি দিয়ে যান। নদীতে বোটিং চালু সহ মাছ চাষের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। মুজনাই নদীর পাড় সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য তিন কোটি সাতাত্তর লক্ষ টাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর খরচ করেছে। এলাকার লোকজনের অভিযোগ, চূড়ান্ত অ পরিকল্পনায় এই কাজ করা হয়েছে। এমনকি, পরিকল্পনার অভাব ও নিয়মিত তদারকি না করায় এই ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রী টাকা বরাদ্দ করার আগে কেন ট্রাক টার্মিনাল সরানোর ব্যবস্থা করলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দা ও বিরোধী দলের নেতারা। এমনকি, এত টাকা খরচে প্রকল্পের কাজ চললেও তিনি কেন নিজে তদারকি করলেন না তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে ফালাকাটাতে।

বহু বছর থেকে ফালাকাটার মুজনাই নদী ও দশমী ঘাটের সৌন্দর্যায়নের দাবি করে আসছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। এই নদীকে কেন্দ্র করে ফালাকাটাতে পর্যটন বিকাশের সুযোগ রয়েছে বলে বাসিন্দারা দাবি করছিলেন। নদীর পাড়ে গাছ রোপণ করে সেখানে বসার ব্যবস্থা ও বোটিং সহ জাতীয় সড়কের ধারে যে সমস্ত ফাস্ট ফুডের অস্থায়ী স্টল গুলি রয়েছে সে গুলিকে মুজনাই নদীর ফাঁকা জায়গাতে স্থানান্তরিত করার দাবি ওঠে। এমন কি, দশমী ঘাট লাগোয়া মুক্ত মঞ্চে এক সময় নাটক অনুষ্ঠিত হত। জনসমাগম হলে সেই মঞ্চে নানান অনুষ্ঠান করা হলে সেখানে ফালাকাটার সংস্কৃতি চর্চার আদর্শ স্থান হয়ে উঠতে পারত বলে অনেকে মনে করছেন। উদ্বোধনের দিন মানুষজন যা দেখতে পেলেন, তার নির্যাস হল, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ হয়েছে শুধু। নদীর ঘাট বাঁধিয়ে রেলিং ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নদীর ঘাটে ঢোকার মুখে যে পাহাড় সমান ময়লা জমেছে, তা সরানোর ব্যবস্থা হয়নি। উদ্বোধনে মন্ত্রী আসছেন বলে ট্রাকগুলিকে সাজিয়ে যাতায়াতের রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে মাত্র। নদীতে ভেসে আসা কচুরি পানার স্তূপ কে তড়িঘড়ি সরিয়ে নদীর কিছুটা দূরে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে বা ভোরে লোকজন এলেও কোনও বসার ব্যবস্থা করা হয়নি সেখানে। ফালাকাটার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক যোগেশ বর্মনের কথায়, ‘‘এই ঘটনার দায়ভার খোদ মন্ত্রীর। কী কাজ হচ্ছে তা নিয়ে নিয়মিত তিনি রিপোর্ট নিলেন না কেন? কিছু দিন পরে তো যে কে সেই অবস্থা হবে।’’ আরএসপি-র জোনাল সম্পাদকের কথায়, ‘‘বিধায়ক তো বলেছিলেন মুজনাই নদীর সৌন্দর্যায়ন হবে দেখার মতো। এখন দেখছি যা বলা হয়েছে, তার কিছুই হয়নি। টাকার যে টাকা ওই কাজে বরাদ্দ হয়েছে তা খরচ করা হয়নি।’’ তবে জেলার তৃণমূল নেত্রী তথা আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সদস্যা সর্বাণী সিংহ অবশ্য হতাশ হবার মতো কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। যে কাজ বাকি, তা আগামীতে করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE