নিজের পায়ে দাঁড়াবে ভেবেছিলেন। দংশনে ভরা দেহ পাওয়া গেল চা বাগানের নালায়। প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে বলছেন, ‘‘এমনও হয়!’’
নবম শ্রেণির পরেই বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও দিন আর স্কুল-কলেজ যাবে না। হাতে কলমে কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। গত দু’বছর ধরে প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। কখনও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কখনও বা সেলাই-এমব্রয়ডারির কাজ শেখা। সম্প্রতি শালবাড়িতে সেলাইয়ের কাজও শুরু করেন। পরিবারের দাবি, গত মাসে সাত হাজার টাকাও পেয়েছিলেন। বাড়ি লাগোয়া এলাকায় শহরের একটি বিগ বাজেটের পুজোও হয়। সেখানে পুজোর ক’টা দিন পরিবার নিয়ে হইচই করে কাটানোর কথাও ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু পুজো কেন, মহালয়ার সকালও দেখা হল না দাগাপুর চা বাগান লাগোয়া ঢাকনিকাটার তরুণীর। বৃহস্পতিবার দাগাপুর বাগান থেকেই মেলে তাঁর দেহ।
বড়দের রাস্তায় দেখা মাত্রই প্রণাম করা, নিয়মিত প্রতিবেশী বয়স্কদের মামা-কাকা, জেঠিমা-দিদা বলে সম্বোধন করে খোঁজখবর করার অভ্যাসই ছিল তরুণীর। রোজ সকালে বাড়ি থেকে চম্পাসারি মেন রোডে অটো ধরতে যাওয়ার পাথুরে রাস্তার দু’পাশের বাড়িগুলির সকলেই চিনত তাঁকে। তাঁর খুনের খবর শুনে তাই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এলাকাবাসী। তরুণীর দোতলার বাড়ির নীচ তলায় দীর্ঘদিন সপরিবারে ভাড়া থাকতেন অনিল সিংহ। খবরটা পেয়ে থম হয়ে গিয়েছেন।
ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘মেয়েটিকে চোখের সামনে বড় হতে দেখলাম। আমার স্ত্রী ওঁকে খুব স্নেহ করত। এমনও হয়।’’ নিহতের বাড়ির পাশেই বাড়ি মণিকুমার রাইয়ের। তিনি সারা দিন ওই বাড়িতেই মহিলাদের পাশে থেকেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী মিষ্টি করে ডাকত মেয়েটা। ফুটেফুটে মেয়েটা সব সময় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলত।’’
সন্ধ্যায় দেহ বাড়িতে আসার পরে ভিড় উপচে পড়ে। মহিলাদের কান্নার ভাসে এলাকা। কয়েকজন মহিলা জানান, দোষীদের খুঁজে বার করে ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে তো এলাকার মেয়েরা একা পড়াশোনা, কাজকর্ম করতে বাইরে যেতে ভয় পাবে। স্থানীয় বাসিন্দা অমূল্য রায় জানান, কারা দোষী, তাঁদের পুলিশকে দ্রুত খুঁজে বার করতে হবে।
মেয়ের খুনের খবর পাওয়ার পর নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন তরুণীর মা, বোন। বাড়ির কুয়োর পাড়ে বসে জানান, কোনও দিন কোনও সমস্যার কথা বলেনি। ভাল কাজ করে বড় হবে বলত। রাতভর বাড়ির অদূরে পড়ে থাকল, জানতেই পারলাম না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy