Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দলের কোন্দল গড়াল জেলা পরিষদেও

অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ নিয়ে তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দলের প্রভাব দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদেও পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলো। সোমবার বালুরঘাটে দলের গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায়ের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেন জেলাপরিষদের সহকারি সভাধিপতি তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীপদ সরকার। বিধায়ককে “বেইমান” বলতেও তিনি পিছপা হননি। যা শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিধায়ক সত্যেনবাবু।

(বাঁ দিকে) বিপ্লব মিত্র ও (ডান দিকে) সত্যেন রায়। —ফাইল চিত্র।

(বাঁ দিকে) বিপ্লব মিত্র ও (ডান দিকে) সত্যেন রায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০২:৩৪
Share: Save:

অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ নিয়ে তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দলের প্রভাব দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদেও পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলো। সোমবার বালুরঘাটে দলের গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায়ের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেন জেলাপরিষদের সহকারি সভাধিপতি তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীপদ সরকার। বিধায়ককে “বেইমান” বলতেও তিনি পিছপা হননি। যা শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিধায়ক সত্যেনবাবু। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সহকারি সভাপতির সমালোচনা করেছেন তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদাও। মুখ্যমন্ত্রীর রায়গঞ্জে দুই দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা আগে দলের প্রশাসনিক পদাধিকারির মধ্যে টানাপড়েনে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে দল সূত্রেই খবর। রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি বৈঠক করবেন। কিন্তু তাঁকে একান্তে পেলে ওই বিষয়ে নালিশ জানাবেন বলে এ দিন বিধায়ক সত্যেন রায় জানিয়ে দিয়েছেন।

তৃণমূলের এই গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসতে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের জেলা পরিষদের সঙ্গে যদি তাদের দলের বিধায়কদেরই এমন অহি-নকুল সম্পর্ক হয়, তবে জেলার উন্নয়নে তার প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। বিধায়ক কোটার টাকাতেও তো জেলাপরিষদ ও পঞ্চায়েত গুলির রাস্তাঘাট, পানীয় জলের উন্নয়ন হয়। আমরা নজর রাখছি।’’ আরএসপির জেলা নেতা বিমল তরফদারের অভিযোগ, ‘‘তপন ব্লকের একটি অংশ গঙ্গারামপুর বিধানসভায় রয়েছে। কিন্তু সেখানে বিধায়ক তহবিলের টাকায় এ যাবত কোনও উন্নয়নের কাজ হয়নি।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সঙ্গে বিশেষত গঙ্গারামপুরের বিধায়কের সমন্বয়ের অভাব প্রথম থেকেই রয়েছে। অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ নিয়ে ওই বিরোধ প্রকাশ্যেও এসেছে। তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দাবি, ‘‘মনোমালিন্য হলেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কখনও প্রভাব পড়বে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কালীপদবাবু কী বলেছেন জানি না। তবে অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ তিন মাস আগেই হয়েছে। এখন ওই বিষয় নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠছে?’’ গঙ্গারামপুরের নন্দনপুরে দলের অঞ্চল সভাপতি মজিরুদ্দিন মণ্ডলকে সরিয়ে দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অনুগামী নুরুল ইসলামকে ওই পদে বসানোয় দুদিন আগে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার বিধায়ক সত্যেন রায়। প্রয়োজনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গিয়ে ধর্নায় বসারও হুমকি দেন। এমনকী, দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান বিধায়ক।

এ দিন বালুরঘাটে জেলা পরিষদ ভবনে সভাধিপতি ললিতা টিগ্গাকে পাশে নিয়ে সহকারি সভাধিপতি তথা গঙ্গারামপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি কালীপদ সরকার সত্যেনবাবুকে তুলোধোনা করে তাঁকে ‘বেইমান’ বলে অভিহিত করেন। কালীপদবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের হারে আমি বেশি কষ্ট পাবো। তারচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন দলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু। যাঁর নেতৃত্বে এই জেলায় বিরোধীরা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সত্যেনবাবুরা দল তৈরির চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সত্যেনবাবুর ওই অভিযোগ করার পিছনে কারণ হলো উনি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসেছেন।’’ সাংগঠনিক কোনও ক্ষমতা ওঁর নেই বলে দাবি করে কালীপদবাবুর তোপ, ‘‘ওঁনার নেতৃত্বে কংগ্রেস ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। এখন তৃণমূলে এসে গোলমাল তৈরি করছেন।’’

এ দিন পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিধায়ক সত্যেনবাবু বলেন, ‘‘কালীপদবাবুর মতো লোক কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারেন। আমি সেটা পারি না। তাছাড়া বিভিন্ন দল থেকে সমস্ত মানুষকে সংগঠিত করে দলনেত্রী তৃণমূলকে তৈরি করেছেন। আমরা দিদির দল করি। দিদিকে ছাড়া কাউকে চিনি না।’’ অপর বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদাও সত্যেনবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়কেরা নিজের বিধানসভা দেখুন, কলকাতার বৈঠকে এই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। এরপরেও দেখলাম জেলায় বিধায়কদের অন্ধকারে রেখে অঞ্চল কমিটি তৈরি হলো। সত্যেনবাবুর বিরুদ্ধে এ দিন যে অপমান করা হয়েছে, তা অনৈতিক। প্রতিবাদ করার ভাষা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE