E-Paper

জলপদ্ম আকাশমুখী, ছক্কা হাঁকাচ্ছে হিমঘরের ইলিশ মাছ

লক্ষ্মীপুজোয় জলপদ্মের দাম আকাশমুখী। একটি কুঁড়ির দামই জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির বাজারে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আপেলের দামের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে ‘জলশিঙাড়া’ বা পানিফলের দাম।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৫
লক্ষ্ণীপুজোর বাজার।

লক্ষ্ণীপুজোর বাজার। —নিজস্ব চিত্র।

সেই কবে ভিটেমাটি ছেড়ে আসা কত-কত মানুষের। তখন দশমীতে পান্তার সঙ্গে দেবীদুর্গার প্রতিমার সামনে সাজিয়ে দেওয়া হত পদ্মার ইলিশ। কম আঁচে ভাল করে ভাজা ইলিশ। কোজাগরী পূর্ণিমার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুজোর নৈবেদ্যেও খিচুড়ির থালার এক পাশে সযত্ন সাজানো থাকত ইলিশমাছ ভাজা। তার পর থেকে ইলিশ খাওয়া সে বছর বন্ধ হত পূর্ব বাংলায়। কারণ, ইলিশের তখন ডিম পাড়ার সময়। ফের ইলিশ খাওয়া শুরু হত সরস্বতী পুজোর সময় থেকে। দুর্গার এক কন্যা ইলিশ পাবেন, আর এক কন্যা পাবেন না— বাঙালবাড়িতে কখনও ঘটত না। সে ঐতিহ্য এখনও রয়েছে উত্তরে। তাই লক্ষ্মীপুজোয় মাথাচাড়া দিয়েছে ইলিশের দাম।

জলপাইগুড়িতে ইলিশ এসেছে মায়ানমার থেকে। কাঁচা ইলিশ, যার দাম পাইকারি বাজারে কেজি-প্রতি চোদ্দোশো টাকা। খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দু’হাজারের কাছাকাছি। হিমঘরের ইলিশও কিছু বিক্রি হচ্ছে। তার দাম খোলা বাজারে ষোলোশো টাকার কাছাকাছি। এই দর বেড়েছে লক্ষ্মীপুজোর সৌজন্যেই। তবে স্বস্তিও রয়েছে। কোজাগরী রাতের আগে, ইলিশ নিয়ে কাড়াকাড়ির বাজারে দাম কিছুটা কমেছে অন্যান্য মাছের। রুই বা কাতলা কেজি-প্রতি মিলছে আড়াইশো টাকায়। বাংলাদেশের পাবদা বিক্রি হচ্ছে চারশো টাকা দরে। পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী মুন্না শাহ বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর জন্যই ইলিশের দাম বেড়েছে। গঙ্গা-পদ্মার ইলিশ বেশি আসে না। মায়ানমার থেকেই আসে।’’

এ বারও লক্ষ্মীপুজোয় জলপদ্মের দাম আকাশমুখী। একটি কুঁড়ির দামই জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির বাজারে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আপেলের দামের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে ‘জলশিঙাড়া’ বা পানিফলের দাম। তবে আনাজের দাম দুই শহরের পার্থক্য এঁকে দিয়েছে। জলপাইগুড়ির বাজারে দাম তুলনামূলক কম। ফুলকপি ৫০ টাকা কেজি। খিচুড়ি-সঙ্গী লাবড়ায় অপরিহার্য মিষ্টি কুমড়ো কেজি-প্রতি ৪০ টাকা। জলপাইগুড়ির আনাজ ব্যবসায়ী বাবলু দাস বলেন, ‘‘এ বার আনাজের জোগানে সমস্যা ছিল না। শীতের আনাজ চাষও হয়েছে বেশি। তাই দাম খুব একটা বাড়েনি। যেটুকু বেড়েছে, পুজোর বাজার বলেই।’’

তবে শিলিগুড়ির ক্ষুদিরাম পল্লি, হায়দার পাড়া, সুভাষপল্লি থেকে মহাবীরস্থানে কেজি-প্রতি আনাজের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে বলে ক্রেতাদের দাবি। তিন-চার দিন আগেও যে আনাজ কেজি-প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় মিলত, শুক্রবার তা বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এর কারণ হিসাবে অতিবৃষ্টিতে আনাজ মার খাওয়ার কথা জানাচ্ছেন কৃষকেরা।

শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ির আনাজ চাষিরা জানাচ্ছেন, প্রত্যেক বার লক্ষ্মীপুজোর আগে, শীতের আগাম আনাজ ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলো উঠে যেত। এ বার চাষ শুরু হলেও বৃষ্টিতে অনেকাংশে নষ্ট হয়েছে। এ বার বাইরের আনাজ বেশি ঢুকছে শহরের বিভিন্ন বাজারে। চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে দামও। ক্ষুদিরাম পল্লি আনাজ বাজারের সম্পাদক স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুজোয় আনাজের দাম কিছুটা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এ বার চাহিদা ভালই রয়েছে।’’

আনাজ-বাজারের এই ছবি অল্প-বিস্তর প্রতি বছরই দেখা যায়। তবে এ বার পদ্মকুঁড়ির মতোই হিমঘরের ইলিশ যেন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ছক্কা হাঁকাচ্ছে উত্তরে।

তথ্য সহায়তা: নীতেশ বর্মণ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy