Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রীকে কুর্নিশ করলেন শিক্ষিকা

প্রথম বিভাগে ৩০১ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে সে। তবে তার আশা ছিল, অন্তত সাড়ে তিনশো নম্বর পাবে। এখন সে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কলকাতায় পড়তে চায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ১৪:১৫
Share: Save:

জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে ১৫ দিন পরপর নিতে হয় রক্ত। তাও আবার যেতে হয় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরের কলকাতায়। কিন্তু তাতে লেখাপড়ায় কোনও ছেদ পড়েনি। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়েই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিল থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছাত্রী মালদহের বার্লো বালিকা বিদ্যালয়ের আয়োশী সাটিয়ার। প্রথম বিভাগে ৩০১ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে সে। তবে তার আশা ছিল, অন্তত সাড়ে তিনশো নম্বর পাবে। এখন সে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কলকাতায় পড়তে চায়। চিকিৎসার কারণেও সে কলকাতায় থাকতে ইচ্ছুক। মালদহ বার্লো বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার বলেন, ‘‘অসুস্থতা সত্ত্বেও আয়োশী যা ফল করেছে, তাতে আমরা ওকে কুর্নিশ জানাই।’’ আয়োশীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মালদহ জেলার আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্তও।

ইংরেজবাজার শহরের ফুলবাড়ি মিস্ত্রিপাড়ায় বাড়ি পেশায় কেবল ব্যবসায়ী অসীম সাটিয়ারের। স্ত্রী পম্পাদেবী গৃহবধূ। তাঁদেরই একমাত্র মেয়ে আয়োশী। অসীমবাবু বলেন, ‘‘মাত্র তিন মাস বয়সেই মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়।’’ সামান্য আয়, তবুও তাঁর মেয়ের চিকিৎসা সবই করাচ্ছেন। আগে মাসে ২১ দিন পরপর রক্ত নিতে হত, এখন মাসে দু’বার করে রক্ত নিতে হয়। কলকাতার ধর্মতলায় থাকা লায়ন্স ক্লাবের ব্লাড ব্যাঙ্কের ডে কেয়ার ইউনিটে ভর্তি থেকে মেয়েকে দু’প্যাকেট করে রক্ত দিয়ে নিয়ে আসতে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগেও রক্ত দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল, যাতে পরীক্ষায় সে সুস্থ থাকে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বেশি অসুস্থ ছিল সে, ফলে পরীক্ষা ভাল দিতে পারেনি। মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছিল। তবে এ বার প্রথম বিভাগেই পাশ করেছে। ৩০১ পেয়েছে। এ দিন মেয়ের ফল জানার পর খুশি বাবা-মাও। তাঁরা জানিয়েছেন, শরীর অসুস্থ থাকলেও লেখাপড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছে মেয়ের। স্কুলে সে ভাবে যেতে পারত না, তাই বাড়িতেই পড়াশোনো করত সে। টিউশনও পড়ত। মেয়ে ভাল ফল করেছে আমরা খুশি। আয়োশী বলে, ‘‘আমার আশা ছিল অন্তত সাড়ে তিনশো পাব। এখন ইচ্ছে কলকাতায় গিয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার। কলকাতায় পড়লে চিকিৎসাও ভাল ভাবে মিলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE