একটু অবসরে বাড়িতে স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে।
তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। স্বামীকে দেখে ভাবতাম, সারা দিন না খেয়ে কী করে কেউ থাকতে পারে। হয়ত সকালে টক দই আর চিঁড়ে খেয়ে বেরিয়েছে। ফিরল অনেক রাতে। জিজ্ঞেস করে জানালাম, সারা দিন নাকি চা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই খায়নি। যে দিন বাড়িতে থাকত, দু’দণ্ড যে কথা বলব, তারও উপায় নেই। সারা দিন বাড়িতে লোকের ভিড় আর রাজনীতির আলোচনা। আমি আটপৌরে গৃহবধূ। সংসারই আমার কাছে সব। তাই স্বামীর জীবনযাপন নিয়ে খুব চিন্তায় থাকতাম। পরের দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে দিতাম, দুপুরে খেতে আসবে না জানি, অন্তত অন্য কারও বাড়িতে সময় করে খেয়ে নিও। রাতে বাড়ি ফিরলে প্রথম প্রশ্নই জিজ্ঞেস করতাম, ‘‘দুপুরে খেয়েছো তো?’’ সারা দিন ছোটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে ফিরলেও রোজ রোজ আমার প্রশ্ন শুনে উনি কিন্তু বিরক্ত হননি কোনও দিন। হাসি মুখে বলেছেন, ‘‘খেয়েছি।’’ আমি কোনও দিন মুখ দেখে বুঝতে পারতাম, মোটেই খাওয়া হয়নি দুপুরে। আমি যাতে দুঃখ না পাই, তাই খেয়েছি বলেছে। তবু খুশিই হতাম। আমি যাতে দুঃখ না পাই, তাই তো বলেছে।
কখন যে ওঁর জীবনযাপনও আমার ভাল লাগতে শুরু করল, তা টের পাইনি। তবে একটা সময় উপলব্ধি করলাম, স্বামী যে কাজ করছেন, সেই কাজে যাতে কোথাও কোনও অসুবিধে না হয়, সে জন্য তাঁকে সাহায্য করতে হবে। বাইরে তো আর আমি সাহায্য করতে পারব না। যাতে বাড়ি ফেরার পর কোনও অসুবিধেয় না পড়েন। যা যা খেতে ভালবাসেন, সে সব যেন তৈরি করে রাখতে পারি। সে চেষ্টা আমি এখনও করি। সংসারের ব্যাপারে অবশ্য তিনি কখনও উদাসীন ছিলেন না। সব কিছু মানে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাড়িতে এনে রেখে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। তার পরেও নানা কিছু প্রয়োজন হত। সেগুলি আমি জোগাড় করার চেষ্টা করতাম। সব সময় ভাবতাম তিনি যেন কোনও ব্যাপারে কখনও বিব্রত না হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy