প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে এখনও সচেতন নন মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
বছর সাতেক আগে শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় অনেক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে গরুর সংখ্যাই ছিল বেশি। গোড়ায় অ্যানথ্রাক্স জাতীয় সংক্রমণ বলে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু, ময়নাতদন্তের পরে শিলিগুড়ির পশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা চমকে যান। দেখা গিয়েছিল, অধিকাংশ গরুর পাকস্থলিতে জমে রয়েছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ।
সেই সময়ে শান্তিনগর, জলেশ্বরী, আশিঘর লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধে প্রচারে নামে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তাতে বাই পাস লাগোয়া এলাকায় কিছুটা হলেও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার কমে যায়। গবাদি পশুর মড়কের ঘটনা কাছ থেকে দেখেছিলেন শান্তিনগরের বাসিন্দা সুকুমার দাস, স্বপন রায়ের মতো অনেকেই। তাঁরা জানান, সেই সময়ে শিলিগুড়ি পুর এলাকার থেকেই মাইকে প্রচার হয়েছিল। সুকুমারবাবুরা চান, ফের পুরসভা, পঞ্চায়েত লাগাতার প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধে প্রচারে নামুক।
বিপদ আরও আছে। শিলিগুড়ি হর্টিকালচার সোসাইটি সারা বছরেই নানা এলাকায় গাছের চারা বোনার কাজ করে থাকে। নানা এলাকায় গাছের পরিচর্যা, তদারকির কাজও করে থাকে একাধিক সংস্থা। তাঁদের অনেকেই জানান, অতীতে শহরে যে পরিমাণ চারা বোনা হতো তার সিংহভাগই বাডত। ইদানীং শহরে চারা বুনলে তার অর্ধেক বাঁচবে কি না তা নিয়ে সংশয় থাকে। কারণ, নানা এলাকায় চারা বোনার সময়ে মাটি খুঁড়তে গিয়ে রাশি রাশি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ উঠেছে। শিলিগুড়ি হর্টিকালচার সোসাইটির সভাপতি তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা নান্টু পালের অভিজ্ঞতাও একই। তাঁরা হিলকার্ট রোড, সেবক রোডে সংস্থার সোসাইটির পক্ষ থেকে চারাগাছ বুনেছেন। সম্বৎসর পরিচর্যাও করে থাকেন। নান্টুবাবু বলেন, ‘‘আগে এমন ছিল না শহরের মাটি। এখন চারা বুনতে গেলে বেশির ভাগ জায়গায় মাটি খুঁড়লেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ উঠে আসে। চারা বোনার পরে শেকড় মাটির গভীরে যেতে বাধা পায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের জন্য। সে জন্য অনেক জায়গায় চারা বোনার পরে বাঁচে না।’’ তাই পুরসভার তরফে জরুরি ভিত্তিতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধের জন্য অভিযান হওয়া দরকার।
শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠনের কর্তারা স্বীকার করেছেন, পুরসভার তরফে কড়া পদক্ষেপ নয়, বারবার অনুরোধ করলেই শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, অতীতে দেখা যেত পুরসভার পরিবেশ বিভাগের কাউন্সিলর সুজয় ঘটক নিয়ম করে নানা বাজারে, শপিং মলে গিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের জন্য অনুরোধ করতেন। তাতে কাজও হয়েছে।
যেমন শিলিগুড়ির উপকণ্ঠের ‘কসমস’ মলে এখনও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার হয় না। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলে। পরিবেশ, শহরের ভবিষ্যৎ, সুনামের কথা মাথায় রেখে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের অনুরোধ করে আমরা সাড়া পেয়েছিলাম। গোটা শিলিগুড়ি জোট বেঁধে পথে নেমে ‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফ্রি সিটি’ হিসেবে শিরোপা আদায় করেছিল। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর জন্য শহরের সেই সুনাম নষ্ট হয়ে গেলে পুরসভা-প্রশাসনকে আগামী দিনে কৈফিয়ৎ দিতে হবে।’’
শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও মানছেন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের প্রচারে আরও গতি আসা দরকার।
তা হলে সম্প্রতি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের পক্ষে গোটা শহরের সিংহভাগ মানুষ সওয়াল করার পরেও পুরসভা কেন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে? অশোকবাবু বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের কুফল নিয়ে নিয়মিত প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জনশুনানির পরে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে সরকারকে। সেটা আমাদের কাছে পাঠাবে। বোর্ড মিটিঙে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা কার্যকর হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy