সেবক রোডে সঙ্গীতার ঘর সিল করছে পুলিশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
প্রবল জনমতের চাপে সঙ্গীতা কুণ্ডুর অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করতে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গড়তে বাধ্য হলেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। রবিবার সিটের তদন্তকারী অফিসাররা গিয়ে সঙ্গীতা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেটি সিল করে দিয়েছেন। কিন্তু, যে কাজটা দুমাস আগে অভিযোগ পেয়ে ভক্তিনগর থানার করা উচিত ছিল, তা এত দিন পরে হল কেন, তা নিয়ে পুলিশ মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী, ভক্তিনগর থানার কয়েকজন অফিসার কেন গোড়া থেকে তদন্তে গড়িমসি করেছেন, তা নিয়ে তরুণীর পরিবার নানা সন্দেহ করছেন। ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দাবিও তুলেছেন পরিবারের লোকজন। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তথা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীও সঙ্গীতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সঙ্গীতার অন্তর্ধান নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠছে তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। পুলিশ নিশ্চয়ই রহস্যের কিনারা করবে।’’
ইতিমধ্যে শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য তো গোটা ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোকবাবু বলেন, ‘’২৭ বছরের একটা মেয়ে কর্মস্থল থেকে নিখোঁজ হয়ে গেল। অপহরণের অভিযোগ হল। মামলাও হল। অথচ ফ্ল্যাটে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে সিল করা হল না। দু’মাস বাদে তল্লাশি করলে কিছু পাওয়া যায়? এখন সিল করা থেকেই বোঝা যাচ্ছে আগে পুলিশ দায়সারা তদন্ত করেছে। এটা মেনে নিতে পারব না। আমি বিধায়ক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের আর্জি জানাব।’’ তিনি জানান, পুলিশ তরুণীর হদিস করতে না পারলে শিলিগুড়িতে কর্মক্ষত্রে মেয়েরা যে নিরাপদ নয়, সেটাই স্পষ্ট হবে।
একাধিক জিম, পার্লার ও ডান্স অ্যাকডেমির পরিচালক সংস্থার কর্মী সঙ্গীতা সেবক রোডের অফিস চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়েছেন গত ১৭ অগস্ট। ওই সংস্থার মালিক পরিমল সরকার দাবি করেছেন, তিনি ঘটনার দিন রাত ৯টা নাগাদ থেকে সঙ্গীতাকে আর দেখতে পাননি। ঘটনাচক্রে, সেবক রোডের ওই অফিসের উপরে পরিমলবাবুর একটি ফ্ল্যাটেই বছর দুয়েক ধরে থাকতেন ওই তরুণী। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর থেকে পরিমলবাবুই তাঁর দেখাশোনা করতেন বলে সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন। ২৬ অগস্ট পরিমলবাবু ভক্তিনগর তানায় ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন। ৫ সেপ্টেম্বর বাড়ির লোকজন পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে সঙ্গীতাকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। অঞ্জলিদেবীর দাবি, ‘‘আমাকে মেয়ে একদিন বলেছিল, ওর কিছু হলে সে জন্য পরিমলই দায়ী থাকবে। তাই অভিযোগ করেছি। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’ পরিমলবাবু অবশ্য বারেবারেই দাবি করছেন, তিনি নির্দোষ এবং পুলিশ সঙ্গীতাকে খুঁজে পেলেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।
কিন্তু, পুলিশের ভূমিকা নিয়েই জনমানসে ক্ষোভ ক্রমশ দানা বাঁধে। ভক্তিনগর থানা বাড়িতে পর্যন্ত খোঁজ নিতে যায়নি। বরং, থানা চত্বরে কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম ভাসিয়ে জানানো হয়, তাঁরা মেয়েটিকেই দোষী মনে করছেন। ওই থানার অফিসারদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। শিলিগুড়ির কছারি রোড যুবক সঙ্ঘের সদস্য হলেন ওই তরুণীর দাদা শম্ভুবাবু। ক্লাবের পক্ষ থেকে শনিবার তৃণমূল নেতা মদন ভট্টাচার্যকে নিয়ে পুলিশ কমিশনারের দফতরে যান শিলিগুড়ির অনেকেই। রাতারাতি ‘সিট’ গঠিত হয়। তদন্তে ফাঁক ভরাটের চেষ্টা শুরু হয়।
পুলিশের অন্দরের খবর, গোড়া থেকে ভক্তিনগর থানা মিসিং ডায়েরি গুরুত্ব দিয়ে দেখলে বিতর্ক এড়ানো যেত। সাধারণত, কর্মস্থল থেকে কোনও তরুণী নিখোঁজ হলে সেখানে গিয়ে জনে জনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের তা নথিভুক্ত করা উচিত। অপহরণের অভিযোগের পরে মামলা দায়েরের পরে ভক্তিনগর থানার পক্ষ থেকে ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়নি ও সিল না করায় সংশ্লিষ্ট অফিসারররা বিভাগীয় তদন্তের মুখে পড়বেন বলেও কর্তাদের অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy