উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানা এলাকার কিশোরী খুনের ঘটনায় নতুন মোড়। ধর্ষক এবং খুনি কি নির্যাতিতার প্রেমিক? উঠছে সেই প্রশ্ন।
পুলিশ সূত্রে খবর, চোপড়া থানার বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে সমাজমাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল তাঁকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে ধৃত যুবকের। মাত্র ৭ দিনের পরিচয়ের তাঁরা দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম সাক্ষাতের পরেই নিখোঁজ হয়ে যায় দশম শ্রেণির ছাত্রীটি। ৬ দিন পর গত রবিবার ওই নাবালিকাকে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ‘প্রেমিক।’
জানা গিয়েছে, অক্টোবর মাসেই দশম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে ধৃতের পরিচয় হয়। ২৭ অক্টোবর স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরোয় মেয়েটি। আর বাড়ি ফেরেনি সে। কোথাও তাকে খুঁজে না পেয়ে লালবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার। ঘটনাক্রমে গত রবিবার কিশোরীর দাদা একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন পান। ফোন ধরতেই বোনের গলা শুনতে পান তিনি। দাদাকে মেয়েটি জানায় তাকে সোনাপুর এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে।
এর পর রবিবারই গুরুতর এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিখোঁজ কিশোরীর খোঁজ পাওয়া যায় ইসলামপুর হাসপাতালে। পুলিশ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। হাসপাতালে ছুটে যান ছাত্রীর আত্মীয়েরা। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় মেয়েটির। পরিবারের দাবি, অপহরণের পর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল ছাত্রীর উপর। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
ওই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত কি না, এখনও পরিষ্কার নয়। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত আর কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। মৃতার পরিবারের দাবি, এই জঘন্য কাজ একা করেননি অভিযুক্ত। তাঁর সঙ্গে আরও কেউ ছিলেন। অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, অপহরণ, ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধৃত যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে আর কারা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:
চোপড়ার কিশোরীর মৃত্যুতে আতঙ্কিত পুরো গ্রাম। সেখানকার জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত বলছেন, গোটা এলাকা ভীত-সন্ত্রস্ত। বিশেষ করে যে পরিবারে মেয়ে রয়েছে, তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বাবা-মায়েরা। তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি মোহাম্মদ রাজু বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতেও মেয়ে রয়েছে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে একটা মেয়েকে এ ভাবে অত্যাচার করে যারা খুন করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’’ তৃণমূলনেতার মত, কিশোর-কিশোরীদের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে ভাবনাচিন্তা করা উচিত বাবা-মায়েদের। তাঁর কথায়, ‘‘সমাজমাধ্যম এবং ফোনে মাত্র ৭ দিনের পরিচয় কী ভাবে দশম শ্রেণির একটি ছাত্রীর এতটা আস্থা অর্জন করে নিয়েছিল অভিযুক্ত, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা সকলেই চাই, পুলিশ দ্রুত অভিযুক্তদের খুঁজে বার করুক। তাদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক।’’