Advertisement
E-Paper

পরিষেবার নাগরিক মান চায় ইসলামপুর

একদিকে ছৌসিয়া, কাঁঠালবাড়ি। অন্য প্রান্তে শান্তিনগর। একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে বিহারের খেজুরবাড়ি। দক্ষিণে মিলনপল্লির পরেই গুঞ্জরিয়া উত্তরে দূর্গানগর। তার পরেই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। একনজরে এটাই হল ইসলামপুর শহরের মানচিত্র। যেখানে নগরায়ণের গতি অনেক স্তিমিত।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশন। বাসিন্দাদের দাবি, এই নামের সঙ্গে যুক্ত হোক ইসলামপুর টাউনের কথাও। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশন। বাসিন্দাদের দাবি, এই নামের সঙ্গে যুক্ত হোক ইসলামপুর টাউনের কথাও। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

একদিকে ছৌসিয়া, কাঁঠালবাড়ি। অন্য প্রান্তে শান্তিনগর। একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে বিহারের খেজুরবাড়ি। দক্ষিণে মিলনপল্লির পরেই গুঞ্জরিয়া উত্তরে দূর্গানগর। তার পরেই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। একনজরে এটাই হল ইসলামপুর শহরের মানচিত্র। যেখানে নগরায়ণের গতি অনেক স্তিমিত। উত্তরবঙ্গের আর পাঁচটা শহরে যেমন ‘ফ্ল্যাট-কালচার’-এর রমরমা, তেমন কিন্তু হচ্ছে না ইসলামপুরে। কারণ, দৈনন্দিন নাগরিক পরিষেবার মান আজও অনেকটাই গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যায়ের।

ইসলামপুর শহর এলাকা যখন গ্রাম পঞ্চায়েতের দখলে ছিল, তখন দীর্ঘদিন প্রধান ছিলেন কংগ্রেসের কানাইয়ালাল অগ্রবাল। যিনি পরে অনেকদিন পুর চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন। সেই কানাইয়ালালবাবুও মানছেন, এলাকার আধুনিকীকরণের কাজ অনেকটাই বাকি রয়েছে। পুরসভার তরফে নতুন বাস স্ট্যান্ড, একাধিক অতিথি নিবাস হয়েছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোয় প্রচুর ঘাটতি রয়েছে বলে প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান মনে করেন। শুধু তা-ই নয়, আজ, পর্যন্ত ইসলামপুর থেকে সরাসরি কলকাতা কোনও বাস কেন চালু করেনি এনবিএসটিসি তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের। প্রাক্তন পুরকর্তা বলেন, “এনবিএসটিসি ইসলামপুর থেকে কলকাতা একটা বাস চালু করতেই পারে। কিন্তু, কেন যে করে না সেটা বুঝতে পারি না।”

এনবিএসটিসি সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, শিলিগুড়ি সহ ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে কলকাতাগামী সব বাসই ইসলামপুর দিয়ে যাতায়াত করে। সে জন্য ইসলামপুর থেকে সরাসরি বাস অতীতে চালু হলেও পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী দিনে চাহিদা বুঝে পদক্ষেপ করা হবে বলে সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন। ইসলামপুরের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা অনেকেই জানান, দূরপাল্লার বাস তথা কলকাতার বাসে ইসলামপুর থেকে ওঠার ক্ষেত্রে আসন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে বলেই সরাসরি একটা গাড়ি থাকা দরকার।

আরও একটা বিষয়ে ইসলামপুরের বাসিন্দারা আক্ষেপ করেন। তা হল শহরের নাম ইসলামপুর। রেল স্টেশনের নাম আলুয়াবাড়ি রোড। এমন হল কী ভাবে? দশকের পর দশক ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ইসলামপুর। কারণ, ইসলামপুর পুর এলাকার আওতায় রয়েছে আলুয়াবাড়ি স্টেশন এলাকাটি। থেকেই কেন রেলের মানচিত্রে নাম নেই ইসলামপুর টাউনের? দলমত নির্বিশেষে প্রায় সকলেরই দাবি, আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হোক ইসলামপুর টাউন-এর কথাও।

ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী, ইসলামপুর পুরসভার দীর্ঘদিন ধরে যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই কংগ্রেস নেতা কানাইয়ালাল অগ্রবাল কিংবা একেবারেই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা ৯২ বছরের প্রবীণ আইনজীবী অমল কুমার মুখোপাধ্যায়, সকলেই ওই ব্যাপারে একমত। কিন্তু, ইসলামপুর টাউন স্টেশন হিসেবে কবে পরিচিত পাবে আলুয়াবাড়ি তা অবশ্য স্পষ্ট হয় না।

প্রথমে অমলবাবুর কথাই ধরা যাক। বয়সের ভারে কিছুটা কাবু হওয়ায় এখন আর আদালতে যান না। কিন্তু, হালের সব খবরাখবরই রাখেন। নিয়মিত ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে সংবাদপত্র খুঁটিয়ে পড়েন। অমলবাবু বললেন, “আগে তো জলে ভাসত গোটা এলাকা। বর্ষার সময়ে কলার ভেলায় চড়ে ঘোরাফেরা করতে হতো। সেই তুলনায় অনেক বদলেছে ইসলামপুর। কিন্তু, শহরের নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের অনেক ঘাটতি রয়েছে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, ইসলামপুর শহরের স্টেশনের মর্যাদা বাড়ল না। ট্রেনও বেশি থামছে না। স্টেশনের নামের সঙ্গে ইসলামপুর শহরের যোগাযোগটা আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার। যাতে বোঝা যায় স্টেশন যেখানে সেই শহরের নাম ইসলামপুর।”

রেলের ইতিহাস কী বলছে দেখা যাক। অতীতে যখন স্টেশন চালুর কথা হয়, সেই সময়ে আলুয়াবাড়ি বলে এলাকায় কোনও জায়গা ছিল বলে মনে করতে পারছেন না স্থানীয় প্রাক্তন রেল কর্মীদের অনেকেই। ইসলামপুরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবালের দাবি অনুযায়ী, “ওই সময়ে স্টেশন লাগোয়া এলাকায় আলুয়া বলে এক শাকের খেত ছিল। তা থেকেই জায়গাটা আলুয়াবাড়ি বলে পরিচিত হয়ে যায়। রেলের কর্তারা স্টেশনের নাম আলুয়াবাড়ি রোড দেন।”

এর পরে কানাইয়ালালবাবুর সংযোজন, “অতীতে সূর্যাপূর আর কমলপুরের মধ্যে স্টেশনের নামকরণ নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়। দুটি এলাকাই চেয়েছিল তাদের নামে স্টেশন হোক। বিতর্ক এড়াতে রেল স্টেশনের নাম দেয় সূর্যকমল। আমাদের ইসলামপুর ও আলুয়াবাড়ির মধ্যে তেমন কোনও বিরোধ নেই।” যদিও স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, আলুয়াবাড়ির রোড নামটাও যাতে থাকে ও সঙ্গে ইসলামপুর টাউন কথাটি সংযুক্ত হয়, এমন ব্যবস্থা করা দরকার।

তবে স্টেশনের নাম বদলানো সহজ ব্যাপার নয়। এলাকার বাসিন্দা মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, “স্টেশনের নামের সঙ্গে ‘ইসলামপুর টাউন’ যুক্ত করার জন্য আর্জি পেশ করেছিলাম ২০১১ সালে। রেল মন্ত্রক থেকে তৃণমূল সরে যাওয়ায় কাজ এগোয়নি।” স্টেশনের নাম পাল্টানোর পদ্ধতি বড়ই জটিল। তা পাল্টানো ঠিক হবে কি না সেটা নিয়ে বিতর্কও দরকার। তাই নাম বদলানোর বিষয়টি কষ্টসাধ্য। কিন্তু, ইসলামপুরের সার্বিক আধুনিকীকরণ তো হতে পারে। ট্রাফিক সিগনাল, সিসিটিভি বসানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয়ের অভিযোগ না-জড়িয়ে, গার্লস কলেজ, আইটিআই, বিএড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়তে উদ্যোগী নেতা-মন্ত্রীরা আন্তরিক ভাবে উদ্যোগী হবেন, এমনই আশা করছে ইসলামপুর। (শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? আপনার নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি- ৭৩৪০০১

amar sohor municipal services city development islampur kishor saha siliguri citizen services city state new north bengal online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy