এক সময়ে মর্যাদাপূর্ণ বিভাগীয় শহর ছিল জলপাইগুড়ি। কিন্তু ধীরে ধীরে অবক্ষয় হয়েছে সে মর্যাদার। সাতটির জায়গায় এখন চারটি জেলার বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ি। আলাদা জেলা হিসেবে কেটে নেওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ারকে। আয়তনের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বও হারিয়েছে তিস্তার কোলে বেড়ে ওঠা এই শহর।
তাই হৃত গৌরব ফিরে পেতে একমাত্র আশা জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করা। এই দাবি শহরবাসীর দীর্ঘ দিনের। আবার জোরাল হচ্ছে সেই দাবি। সম্প্রতি কংগ্রেস টাউন ব্লক কমিটি এই দাবি নিয়ে আন্দোলনেও নেমেছে।
তাদের বেশ কয়েকটি দাবির মধ্যে জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে পরিণত করার দাবিটিই প্রধান। ‘জনসংযোগ কর্মসূচি’র মাধ্যমে এই দাবি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে কংগ্রেস।
রবিবার শহরের স্টেশন রোডে তাদের আন্দোলন এবং পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কর্পোরেশনের দাবি তোলা হয়। অভিযোগ করা হয়, বর্তমান পুর সরকারের উদাসনীতার কারণেই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই শহর।
কংগ্রেসের টাউন ব্লক প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘২০১০ সালে কংগ্রেস পুরবোর্ড থাকাকালীন কর্পোরেশনের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বাম সরকারে কাছে তা পাঠানোও হয়েছিল। সেই সময়ে শহরের আয়তন, জনসংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে সমীক্ষার কাজও হয়।’’
এরপর রাজ্যে পালাবদল হয়। দলবদলের জেরে গত চার বছর আগে জলপাইগুড়ি পুরসভাও তৃণমূলের দখলে যায়। পিনাকীবাবুর অভিযোগ, তারপর থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, দলে কে কত বড় তোলাবাজ, তাই নিয়ে হিসেবনিকেশে ব্যস্ত শাসকদল। উন্নয়নের বিষয়টি তার আড়ালে চলে গিয়েছে। তাই আগামী দিনে তাদের এই আন্দোলন আরও তীব্র করার হুশিয়ারি দিয়েছে কংগ্রেস।
তবে শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, একই দাবি জানিয়েছেন সাধারণ নাগরিকরাও। ঐতিহাসিক উমেশ শর্মা বলেন, ‘‘যেভাবে খণ্ড হতে হতে জলপাইগুড়ি তার গুরুত্ব হারিয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে গেলে কর্পোরেশন হওয়াটা জরুরি। আয়তনে, কলেবরে বৃদ্ধি পেলে শহরের উন্নয়ন যেমন হবে, তেমনই নতুন দাবি আদায়ের পথও খুলবে।’’
জলপাইগুড়ি পুরসভা সূত্রে খবর, কর্পোরেশন হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। শহর সংলগ্ন অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েত, পাহাড়পুর পঞ্চায়েত ও খড়িয়া পঞ্চায়েতকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। বর্ধিত এলাকাগুলিকে নিয়ে ম্যাপ তৈরির কাজ সম্পুর্ণ এরপর নিয়ম অনুযায়ী ধাপে ধাপে কর্পোরেশনের দাবি আদায়ে এগোবে জলপাইগুড়ি পুরসভা।
কংগ্রেস নেতা তথা জলপাইগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনুদান যেমন বাড়বে, তেমনই নাগারকি পরিষেবাও বৃদ্ধি পাবে।’’ তাই দ্রুত বর্তমান পুরসভাকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আশ্বাস মিলেছে জলপাইগুড়ির পুরপ্রধানের তরফ থেকেও। পুরপ্রধান মোহন বসুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা কার্যকরী করা হয়নি। তবে রাজ্যের বর্তমান শাসক দল এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ধাপেধাপে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা সেই ভাবে বেধে দিতে না পারলেও মোহন বসু এই ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, শহরবাসীর দীর্ঘ দিনের এই দাবি খুব দ্রুতই মেটানোর জন্য যা যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার তা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy