ফের সালিশি সভা করে অভিযুক্তকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার ঘটনা ঘটল মালদহে। চোর সন্দেহে দুই যুবককে জুতোর মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানোর রায় দেন মোড়ল মাতব্বরেরা। একই সঙ্গে তাদের লক্ষাধিক টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কালিয়াচক থানার সিলামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাহাদুরপুর গ্রামে এই ঘটনার পরে কোনও পক্ষই অবশ্য পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি।
অভিযুক্তদের বক্তব্য, সমাজের লোকেরা যা রায় দিয়েছেন, তা মেনে নেওয়া হয়েছে। যাঁর বাড়িতে চুরি হয়েছে তাঁকেও থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গ্রামের মাতব্বরেরা নিষেধ করেছিল বলে অভিযোগ। তিনিও তা মেনে নিয়েছেন। তবে চুরির কথা পুলিশের কানে গেলে এলাকায় একটি টহলদারি দল গিয়েছিল। তাঁরা অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তারপরে এই ঘটনায় মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এদিন কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ এই গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে। এলাকার বিধায়কও কংগ্রেসের। কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক মৌসম বেনজির নুর বলেন, ‘‘সালিশি করা বা কাউকে জুতোর মালা গলায় দিয়ে ঘোরানো একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদের দলের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ এপ্রিল রাতে স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে লুঠপাঠ চালানো ও মারধর করার অভিযোগ ওঠে পড়শি এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই যুবক তারপরে পালিয়ে যায়। শনিবার রাতে তাকে বাড়িতে দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই ধরে ফেলেন। বিষয়টি জানানো হয় সমাজ কমিটিতে। রাতেই সমাজ কমিটি সালিশি সভা ডাকে। সূত্রের খবর, সালিশি সভায় নিজের দোষ স্বীকার করে ওই যুবক। আর এক যুবকও এই ঘটনায় তার সঙ্গী ছিল বলে সে জানায়। তাকেও ডেকে নিয়ে আসা হয়। এর পর গ্রামের একটি স্কুল মাঠে ফের সালিশি সভা বসে বলে অভিযোগ। তাঁরা রায় দেন অভিযুক্ত দুই জনকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর পরের দিন সকালে অর্থাৎ এদিন গ্রামে জুতোর মালা পরিয়ে তাদের ঘোরানো হবে। সালিশি সভার রায় মতো রবিবার দু’জনকে জুতোর মালা পড়িয়ে গ্রাম প্ররিক্রমা করায় বাসিন্দারা। সঙ্গে টিন বাজিয়ে বাসিন্দাদের একাংশ মিছিলে সামিল হন।
মাস পাঁচেক আগে ইংরেজবাজার থানার নরহাট্টার এক বিধবা মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় গ্রামে সালিশি সভা করে মেটানোর চেষ্টা করা হয়। এর পর মানিকচকে এক মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে সালিশি করে মাথার চুল কদম ছাঁট করে ঘোরানো হয়েছিল। এদিন ফের সালিশি সভা করে এমন শাস্তি দানের অভিযোগ ওঠায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy