ইস্তাহার প্রকাশ বামফ্রন্টের। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
জেলায় তাঁদের দখলে থাকা অন্য পুরসভার ‘সাফল্যের’ উদাহরণ তুলে ধরে কোচবিহার পুরসভার নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করল বামফ্রন্ট। রবিবার কোচবিহার জেলা সিপিএম দফতরে বাম নেতারা ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ওই ইস্তেহার প্রকাশ করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে থাকা কোচবিহার পুরসভা এলাকার ওই ইস্তেহারে বামেদের দখলে থাকা তুফানগঞ্জ ও দিনহাটা পুরসভার একাধিক সাফল্যের দাবি উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, তুফানগঞ্জ পুরসভা সিপিএমের একক দখলে রয়েছে। দিনহাটা পুরসভায় ফরওয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যান ও সিপিএমের ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। পুরভোটের মুখে শরিক দলের ঐক্যের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের দখলে থাকা কোচবিহার পুরসভার ‘ব্যর্থতা’ বোঝাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার ভাবনা থেকে ওই উদাহরণ ইস্তেহারে তুলে ধরা হয়েছে বলে বাম সূত্রে খবর।
বামেদের অভিযোগ, কোচবিহারে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারীদের এক টাকার বিনিময়ে পাট্টা দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বর্তমান বোর্ড। ইস্তেহারে বলা হয়েছে, এক টাকার লিজ পাট্টায় খাস জমিতে বসবাসকারীদের জমির অধিকার দেওয়া হবে। যা তুফানগঞ্জ পুরসভা করেছে। সেই সঙ্গে বামেদের অভিযোগ, কোচবিহার পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের হাজিরা ৭৫ টাকা। ওই প্রসঙ্গে ইস্তেহারে দাবি করা হয়েছে, দিনহাটা পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের দৈনিক হাজিরা ৩২০ টাকা। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা ওই পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা বলেন, “কোচবিহার পুরসভাকে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুঠ হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম আয়ের পুরসভা হলেও তাই দিনহাটায় অস্থায়ী শ্রমিকরা অনেক বেশি মজুরি পাচ্ছেন। তুফানগঞ্জে এক টাকায় মানুষ জমির লিজ পেয়েছেন। মানুষের পাশে থাকার দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক বোঝাতে ওই উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।”
বামেদের ওই নির্বাচনী ইস্তেহারে দূষণ ও যানজটমুক্ত শহর তৈরি, নিকাশির উন্নয়ন, ২৪ ঘন্টা পানীয় জল সরবরাহ, বস্তি উন্নয়ন, সুকান্ত মঞ্চ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত করে গড়ে তোলা থেকে শহরে বাসিন্দাদের স্বল্প খরচে ভাড়া থাকবার জন্য আবাসন তৈরির মতো নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের ঢালাও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সেই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলেই শহর উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে যাবতীয় উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। ইস্তেহারে পুর এলাকায় নিকাশী নালা তৈরি না করে ৬৪ লক্ষ টাকার খরচের শংসাপত্র পাঠান, পানীয় জল প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা ৪ বছর ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়েছিল কেন, মিনিবাস স্ট্যান্ডে পার্কিংয়ের তুলনায় স্টলের জায়গা বেশি কেন থেকে স্টল বিক্রির সব টাকা পুরসভার তহবিলে জমা পড়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পুরসভার কর্মী নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। সিপিএম নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অনন্ত রায়, ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর সহ শরিক দলের জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে ওই ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়।
তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “গত ৩৪ বছরে গোটা রাজ্যে বামেরা কোনও উন্নয়ন করেনি। কোচবিহারের পুরসভাগুলিতেও ক্ষমতায় থাকাকালীন বাম পুরবোর্ড এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ কিংবা নয়ছয় ছাড়া অন্য কিছু করেনি। আমরা ক্ষমতায় এলে ওই পুরসভাগুলির ব্যাপারে তদন্ত করাব। সে সব ঢাকতে ভিত্তিহীন অভিযোগে সাজানো ইস্তেহার মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেন।” কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “৩৪ বছর গোটা রাজ্যকে যারা শ্মশানে পরিণত করেছেন, সেই বামফ্রন্টের নেতাদের মুখে এসব কথা শোভা পায় না।” প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ থেকে দেড় দশকের বেশি সময় কোচবিহার পুরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল। দুই বছর আগে কংগ্রেসের সমস্ত কাউন্সিলর দল বদল করায় তৃণমূল বোর্ডের দখল নেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy