Advertisement
১৮ মে ২০২৪

উৎসবের শহরে উদ্বেগ নিরাপত্তা

মলের বাইরে রাস্তায় পার্কিং লট তৈরি হলেও তাতে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেখানেই মলের পার্কিং-এর বদলে ৫/১০ টাকা দিলেই বাইক, স্কুটি বা গাড়ি রাখা যায়।

অবাধে: শপিং মলে ঢোকার পথে মেটাল ডিটেক্টর থাকলেও ব্যাগ পরীক্ষা হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

অবাধে: শপিং মলে ঢোকার পথে মেটাল ডিটেক্টর থাকলেও ব্যাগ পরীক্ষা হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

উত্তরায়ণ উপনগরীর জাতীয় সড়কের ধারে কয়েক একর জায়গা জুড়ে সুবিশাল শপিং মল। ভিতরে শতাধিক দোকান, রেঁস্তোরা, পানশালা, সিনেমা হল। মলের সিসিটিভির ঘেরাটোপে বিরাট পার্কিং লট। কিন্তু ঘণ্টা পিছু ফি বেশি হওয়ায়, জাতীয় সড়কের পাশেই মলের সামনে মাঠে গজিয়ে উঠেছে পার্কিং। মলের সিড়ি থেকে মেরেকেটে ১০০ মিটারের মধ্যেই। এলাকার একদল যুবকের তৈরি পার্কিং-এ ১০ টাকা দিয়ে বাইক, স্কুটি রাখলেই হল। না আছে নিরাপত্তা না রয়েছে সিসিটিভি। পরীক্ষার তো বালাই নেই। কে কারা গাড়ি রেখে যাচ্ছে তারও হদিস পাওয়া দুষ্কর।

একই ছবি সেবক রোডের দুই মাইলের আরেকটি মলেও। একইভাবে মলের বাইরে রাস্তায় পার্কিং লট তৈরি হলেও তাতে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেখানেই মলের পার্কিং-এর বদলে ৫/১০ টাকা দিলেই বাইক, স্কুটি বা গাড়ি রাখা যায়। বড়দিন, বর্ষবরণ তো বটেই পুজোর মরসুম-সহ বিভিন্ন ছুটি দিনে গাড়ির ভি়ড়ে হাঁটাচলা করাই দায়। মলে আসা বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, পুলিশ মলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকে। পুলিশ ভ্যানের দেখাও মেলে। কিন্তু গাড়ি, স্কুটির আড়ালে কোনও নাশকতা যে ঘটবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়!’’

পুলিশ বা মল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, প্রতিটি মলের বাইরে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেখানে সামনে অংশও দেখা যায়। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, দিনের বেলায় সিসিটিভিতে রাস্তায় ছবি দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর তা অনেকটাই আবছা হয়ে যায়। তার উপরে বড় গাছ থাকায় তা অনেকটাই অস্পষ্ট। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের মল, ও বাণিজ্যিক ভবনগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ। বিষয়টি পুলিশের নজরও এড়ায়নি। তাই আগামী কয়েকদিন মলের সামনে একাধিক পুলিশ ভ্যান বা সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ রয়েছে।

এতো গেল বাইরের ছবি, মলগুলিতে ঢোকার ক্ষেত্রে পুরুষ নিরাপত্তারক্ষীরা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরুষদের তল্লাশি করেন। সেখানে মহিলাদের ব্যাগ পরীক্ষার পর তল্লাশি না করেই ভিতরে ঢুকিয়ে দেন মহিলা নিরাপত্তা কর্মীরা। তেমনিই, বড় মলগুলির ঢোকা এবং বাইরে আসার গেটে নিরাপত্তারক্ষী, মেটাল ডোর ফ্রেম, মেটাল ডিটেক্টর জাতীয় নিরাপত্তার সরঞ্জাম মজুত থাকলেও ফাঁকফোকরও রয়েছে।

যেমন প্রতিটি মলের সামনের অংশে একাধিক বহুজাতিক সংস্থার ফুড চেইন রয়েছে। সেখানে ঢোকার আগে তল্লাশির কোনও বন্দোবস্ত নেই। সেগুলিতে ঢুকে ভিতরের দরজা দিয়ে বিনা তল্লাশিতে মলের ভিতরে ঢুকে যাওয়া যায়। রাত বাড়তেই ১০টার পর গেটগুলি অরক্ষিত থাকে বলেও অভিযোগ। তা দিয়ে পানাশালাগুলিতে যাতায়াত চলে। বিহারের লোকজনের আনাগোনার খবরও আসে। মাঝেমধ্যেই মারপিট, গোলমালের অভিযোগও পুলিশের কানে আসে। এমনকি, পানশালায় গুলি চালানোর অভিযোগও ওঠে।

পুলিশ সূত্রের খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর পুলিশ কমিশনার সমস্ত মল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিকে বৈঠক করতে বলেছেন। সেখানে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো, সমস্ত গেটে লোক রাখা, মহিলাদের তল্লাশির পরিকাঠামো তৈরি, রাত ১১টার পর পানশালা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিটি মলের নকশা জমা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ কুকুর ছাড়াও স্পেশাল ব্রাঞ্চ, গোয়েন্দা শাখার অফিসারদের আগামী কয়েকদিন মলগুলিতে ঘোরাফেরার নির্দেশ জারি হয়েছে। তেমনিই, ২৫ ও ৩১ ডিসেম্বর পুলিশ লাইভ ইউ-এর কর্মীরা মলগুলিতে ঘুরবেন। পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘‘আমরা চাই বাসিন্দারা নির্বিঘ্নে বড়দিন, নতুন বছরের উৎসবে মাতুন। কোনও গোলমাল বরদাস্ত করা হবে না। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE