ধৃত রাধেশ্যাম। নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে সেবক রোডের অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্ত সেই হোটেল মালিক রাধেশ্যাম মাহাতোকে গ্রেফতার করা হল। শুক্রবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে যাওয়ার পথে তাকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার পুলিশ। এ দিনই তাকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পেশ করা হয়। তাকে ২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি পূর্ব পিনাকী মজুমদার বলেন, ‘‘গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতেই তাকে ধরা হয়েছে। বাকি অনেকগুলি বিষয় ধৃতকে জেরা করেই জানা যাবে।’’
অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও বেআইনি ভাবে গড়ে ওঠা দোকান কী উচ্ছেদ হবে? ঘটনার পর পাঁচ দিন কেটে গেলেও এখনও পূর্ত, দমকল, পুরসভা, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি চেয়ে কোনও চিঠি কেন পাঠানো হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এদিনও। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, এখনও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। কী ভাবে বেআইনি ভাবে এই ব্যবসা করার সাহস পাচ্ছেন হোটেল মালিকরা? স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, গুমটির কয়েকজন ব্যবসায়ী বিভিন্ন সরকারি দফতরের সঙ্গে বেআইনি যোগসাজস রেখেই দিনের পর দিন এমন কাণ্ড করে চলেছেন।
ঘটনার পাঁচ দিন পরেও রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের পক্ষ থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কবে হবে তারও ভরসা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা। দফতরের শিলিগুড়ির নির্বাহী বাস্তুকার চন্দন ঝা বলেন, ‘‘শহরের বহু জায়গায় এ ভাবে পূর্ত দফতরের জায়গা দখল হয়ে আছে কোথাও দশ বছর, আবার কোথাও পঁচিশ বছর ধরে।’’ তিনি বলেন, ‘‘দখল নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত চিঠি পাঠানো হয়। উপর থেকে নির্দেশ না পেলে, আমাদের পক্ষে দখল উচ্ছেদ সম্ভব নয়।’’
পূর্ত দফতরের জায়গা দখল করে দিব্যি ব্যবসা চলছে শহরের বহু জায়গায়। কে দিচ্ছে তাদের ট্রেড লাইসেন্স, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। সেবক রোডের ওই হোটেলটিতে কোনও ট্রেড লাইসেন্স ছিল না বলে দাবি করেছেন পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ কমল অগ্রবাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছি। তাঁদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া গেলেই আমরা বিনা ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাব।’’
রাস্তার ধারের গুমটিগুলোয় দিব্যি বিদ্যুৎ নিয়ে আলো-পাখা চালানো হচ্ছে। কী ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে? যেখানে কোনও মালিকানার কাগজ নেই? বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ভাবে কোনও সংযোগ দেওয়া হয় না বলে জানানো হয়েছে। তবে বেআইনি ভাবে কিছু জায়গায় যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা স্বীকার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের শিলিগুড়ির ডিভিশনাল বাস্তুকার বিদীপরঞ্জন বর্মন বলেন, ‘‘আমরা নিয়মিত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালাই। বেআইনি সংযোগ কেটেও দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’
সরকারি কর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসের যে কথা উঠেছে, সে সম্পর্কে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রবি রায় বলেন, ‘‘আমি নতুন কাউন্সিলর হয়েছি। আমার বিষয়টি জানা ছিল না।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা সৌমিত্র কুণ্ডুকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মেয়র অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা ভোটের পরেই পুরসভার পক্ষ থেকে যা করণীয়, তা করার চেষ্টা করব। কিন্তু রাজ্য সরকারি দফতরগুলি কেন নিশ্চুপ, তার জবাব দিন মন্ত্রী।’’
এদিনও মৃত রাজা পাশওয়ান ও সারওয়ান মাঝির বয়স সম্পর্কে পরিস্কার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। মৃতদের পরিবারের দাবি অনুযায়ী, তাদের বয়স ১৭-১৮ বছর ধরেই এগোচ্ছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর গাফিলতি পাওয়া গেলে পূর্ত দফতর, বিদ্যুৎ দফতরকেও চিঠি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy