উত্তরবঙ্গ সফরে এসে পাঁচদিন কার্শিয়াঙে থাকলেও শিলিগুড়ির পুলিশ-প্রশাসন বা সরকারি প্রকল্প নিয়ে একটাও কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বলেননি দল নিয়েও। দলীয় সূত্রে খবর, পাহাড়ের মতই শিলিগুড়ির নেতৃত্বকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আগে ভোটে জেতা এবং সংগঠনের কাজ করে দেখানো হোক, তারপরে বাকি কথা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সফর চলাকালীন গত বৃহস্পতিবার দলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার ও অন্য নেতাদের নিয়ে শহরের পূর্ত দফতরের বাংলোয় বৈঠক করেন জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। পরে বৈঠকে যোগ দেন দলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেবও। তিনি অরূপবাবুর সঙ্গে শহরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার আগে কার্শিয়াঙে থাকাকালীন সরকারি অতিথি নিবাসে রাজ্যের এই দুই মন্ত্রী এক দফায় কথা বলেছিলেন। সব ঠিক থাকলে ছটপুজোর পরে জেলার নতুন কোর কমিটি হওয়ার কথা।
জেলা সভাপতি ও অন্য নেতাদের রাস্তায় নেমে কাজের কথা বলেছেন জেলা পর্যবেক্ষক। হিলকার্ট রোডের সেবক মোড় লাগোয়া জেলা অফিস সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনআরসি-বিরোধিতা, ডিজিটাল মাধ্যমে দলের প্রচার, বাম বোর্ডকে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া কথাও বলা হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, একদল নেতাকে দুপুরে না ঘুমিয়ে শহরে ঘুরে বেড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। বাসিন্দাদের অভিযোগ শোনার জন্য দ্রুত একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু বিধানও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলের পুরনো এবং নতুন অংশকে একসঙ্গে রেখে কাজ যাতে হয়, তাও বলা হয়েছে।
এর পরেই গত দু’দিন ধরে শহরের ঘোরা শুরু করেছেন রঞ্জন। তাঁর সঙ্গে দেখা গিয়েছে প্রবীণ নেতা প্রতুল চক্রবর্তী থেকে মদন ভট্টাচার্য, যুব সভাপতি বিকাশ সরকারের মতো তরুণ নেতাকেও। রঞ্জন বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির শহর থেকে গ্রামে নাগরিক পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। ভাঁইফোটা শেষ হতেই আমরা শিলিগুড়ি জুড়ে রাস্তায় নামছি।’’
২০১১-তে শিলিগুড়ি বিধানসভায় জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০১৬-র বিধানসভা, দু’দফার লোকসভা, শিলিগুড়ির পুরসভা ও মহকুমা পরিষদের কোথাও শাসক দল জিততে পারেনি। বিরোধীদের দাবি, দল ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত স্তরে একাধিক বোর্ড দখল করলেও পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদে তৃণমূল বিরোধী দল। এই জায়গাতেই তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের উষ্মা। দল সূত্রের খবর, দলীয় কোন্দল, ভোটে শহরে কিছু নেতাদের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়াও শহর ও গ্রামীণ এলাকায় একাধিক নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও সঠিক সময়ে দল ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেসব খামতি সরিয়ে নতুন করে দল গোছাতেই এ বার মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে।