Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘নুন-ভাত খেতে হলেও ফিরব না আর’

মাসখানেক আগে জীবন একেবারেই অন্যরকম ছিল আকবরের। দাদা আব্দুল সালামের সঙ্গে একই হোটেলে কাজ করতেন তিনি। হোটেলে খাবার পরিবেশন করতেন দু’জনে।

আতঙ্কে: মায়ের সঙ্গে সালাম ও আকবর। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্কে: মায়ের সঙ্গে সালাম ও আকবর। নিজস্ব চিত্র

বাপি মজুমদার
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

রাস্তার পাশে অন্যের ধানের খড় গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন আকবর আলি। উত্তরপ্রদেশের কথা উঠতেই কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তার পরে বললেন, ‘‘এখানে পেট চলে না বলে ওখানে গিয়েছিলাম। আর নয়। নুন দিয়ে ভাত খেয়ে থাকব। জীবন কোনও ভাবে চলেই যাবে।’’

কিন্তু মাসখানেক আগে জীবন একেবারেই অন্যরকম ছিল আকবরের। দাদা আব্দুল সালামের সঙ্গে একই হোটেলে কাজ করতেন তিনি। হোটেলে খাবার পরিবেশন করতেন দু’জনে। মাসের শুরুতেই বাড়িতে পরিজনদের নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। তাঁদের পরিশ্রমের আয়ে বাড়ির চেহারাও ফিরতে শুরু করেছিল।

আচমকা সব ওলটপালট।

দুই ভাইয়ের বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ডাঙ্গিলায়। ছয় সঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার পরে ভয়ে লখনউ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন তাঁরা। সংসারের হাল ধরতে এখন এলাকাতেই দিনমজুরির কাজ করছেন। আকবর জানান, নিয়মিত কাজ জোটে না। কিন্তু আর তাঁরা উত্তরপ্রদেশে ফিরতে চান না।

১৯ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশে হিংসার ঘটনার পরে ডাঙ্গিলার চার ও জনমদোলের দুই শ্রমিককে পুলিশ আটক করে। এখনও তাঁরা জেলে। ওই ঘটনার পরের দিনই কোনও রকমে অন্য শতাধিক শ্রমিকের মতো পালিয়ে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরেন আকবরেরাও।

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় আব্দুল। তিনি জানান, পাঁচ বছর ধরে লখনউয়ে কাজ করতেন দুই ভাই। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা শেখ জামালুদ্দিন, মা ওয়াজেদা বিবি ছাড়াও তিন ভাই, সালামের স্ত্রী রয়েছেন। বাবাও ছিলেন দিনমজুর। একটু বড় হতেই আকবরকে নিয়ে পাড়ি দেন লখনউয়ে। ১৯ ডিসেম্বর লখনউয়ের ঘটনা সব তছনছ করে দিয়েছে। সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি ফেরার তিন সপ্তাহ পরেও সে দিনের স্মৃতি টাটকা।

আব্দুল এ দিন বলেন, ‘‘আমরা তো রোজগারের জন্য ওখানে গিয়েছিলাম। ঝামেলার কথা জানতাম না। পুলিশ এসে মারধর শুরু করে। বাড়ি ফিরে না গেলে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। কোনও রকমে পালাই। একটা ঘরে তারপর আর কী ভাবে ওখানে থাকা যায়!’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটা ঘরে ২৪ ঘন্টা লুকিয়ে ছিলাম। না ছিল শৌচাগার, না খাবার।’’ ডাঙ্গিলায় ফিরে আসা শ্রমিক সজল আলম বলেন, ‘‘ওখান থেকে হোটেল মালিক বারবার ফোন করছেন ফিরে যাওয়ার জন্য। তিনি আমাদের পরিচয়পত্র দেবেন, নিরাপত্তা দেবেন বলছেন। কিন্তু ছ’জন ছাড়া না পেলে ফেরার কথা ভাবতেই পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda UP Anti CAA Movement UP Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE