উত্তরবঙ্গে তো বটেই, রাজ্যেও ‘আমের জেলা’ বলে পরিচিত মালদহ। ফি বছর মালদহ জেলায় অন্তত তিন লক্ষ মেট্রিক টন বা তারও বেশি আমের ফলন হয়। কিন্তু ভিন্ রাজ্য ও দক্ষিণবঙ্গের জেলার আমের জন্য উত্তরবঙ্গে বাজার কমছে মালদহের আমের। চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। আমের দাম নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাইকারি আম বিক্রেতারাও। এই বাজার হারানো নিয়ে দার্জিলিং চায়ের মতো আশঙ্কা বাড়ছে মালদহের আম ঘিরেও।
যদিও মালদহের আমের প্রচার ও প্রসারের জন্য আজ, বৃহস্পতিবার থেকে মালদহ কলেজ মাঠে শুরু হতে চলেছে চার দিনের আম মেলা। কলকাতা এবং নয়াদিল্লিতে সরকারি ভাবে যে আম মেলা হবে, তাতেও মালদহের আম পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এ দিকে, ‘মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র তরফে বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে মালদহকে ‘ম্যাঙ্গো হাব’ করার দাবি জানানো হয়েছে।
ভিন্ রাজ্যের ও দক্ষিণবঙ্গের জেলার আমের জন্য উত্তরবঙ্গে বাজার কমছে মালদহের আমের। কোচবিহার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর বা আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ির বাজারে এখন মূলত দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং বিহার ও উত্তর প্রদেশের আমের ছড়াছড়ি। মালদহের আম থাকলেও তার পরিমাণ খুবই কম। আর মরসুমের শুরুতে ওই বাজার দখল করেছিল বেঙ্গালুরু ও অন্ধ্রপ্রদেশের আম। প্রশ্ন উঠেছে, সস্তার নেপালের চা ঢুকে যাওয়ায় দার্জিলিং চায়ের কদর যেমন কমে গিয়েছে, তেমনই কি মালদহের আমের কদর কমছে? কী কারণে এমন পরিস্থিতি?
মালদহের আম ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, এই জেলায় এখন প্রকৃত আমচাষিরা কম চাষ করছেন। বরং তাঁরা লিজ়ে জমি দিয়ে দিচ্ছেন একাংশ ব্যবসায়ীদের হাতে। সেই ব্যবসায়ীরা মুনাফালাভের জন্য বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহার করছেন আম গাছে। ফলে মালদহের আমের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। অপরিপক্ক আম পেড়ে নিয়ে আম পাকাতে ক্ষতিকর কার্বাইডও ব্যবহার করা হচ্ছে।
মালদহ জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক সামন্ত লায়েক অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা জৈব উপায়ে ও রাসায়নিক সামগ্রী কম ব্যবহার করে আম চাষে জোর দিচ্ছি। পাশাপাশি মালদহ জেলার আমের প্রচার ও প্রসারে আম মেলা করা হচ্ছে।’’
মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘মালদহের আমের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণন বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে জেলাকে ম্যাঙ্গো হাব ঘোষণা করে আর্থিক প্যাকেজ় দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)