Advertisement
E-Paper

শিলনোড়া গুদামে, দিন চলে না জগদীশদের

শিলিগুড়ি এবং তার আশে পাশের এলাকায় ঘুরে শিল কাটানোর কাজ করেন রমেন বর্মন। নেপাল সীমান্তের খড়িবাড়ির কাছে থাকেন তিনি। শিলিগুড়িতে একটি শিল কেটে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পান তিনি। কিন্তু সারাদিন ঘুরে একটি দু’টি তিনটির বেশি কাজ মেলে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৪
মগ্ন: শিল কাটার কাজে ব্যস্ত এক কারিগর। নিজস্ব চিত্র

মগ্ন: শিল কাটার কাজে ব্যস্ত এক কারিগর। নিজস্ব চিত্র

শহরে সেই সুর হারিয়েছিল আগেই। এখন গ্রামবাংলাতেও শোনা যায় না শিল কাটানোর সেই পরিচিত হাঁক। প্যাকেটজাত গুঁড়ো মশলা আর মিক্সার গ্রাইন্ডারের রমরমায় যাও দু’একজন এই পেশা আঁকড়ে রয়েছেন শিল কেটে তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অধিকাংশ বাড়িতেই হেঁসেলের শিলনোড়ার ঠাঁই হয়েছে গুদাম ঘরে।

হাতে গোনা দু’একজন যাঁরা এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন ভবিষ্যত ভেবে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তাঁরা। আলিপুরদুয়ার জেলার ডাঙ্গি গ্রামের জগদীশ দেবনাথ বললেন, ‘‘৩০ বছর ধরে গ্রাম শহর ঘুরে ঘুরে শিল কাটানোর কাজ করি। আয় এখন তলানিতে ঠেকেছে। একটি শিল কেটে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা মেলে। সারাদিন ঘুরে বড়জোর তিন থেকে চারটি কাজ মেলে। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে। এই আয়ে এখন আর সংসার চলে না। অথচ এই পেশায় থেকেই সংসার চালিয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।’’

শিলিগুড়ি এবং তার আশে পাশের এলাকায় ঘুরে শিল কাটানোর কাজ করেন রমেন বর্মন। নেপাল সীমান্তের খড়িবাড়ির কাছে থাকেন তিনি। শিলিগুড়িতে একটি শিল কেটে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পান তিনি। কিন্তু সারাদিন ঘুরে একটি দু’টি তিনটির বেশি কাজ মেলে না।

কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ির ৫৭ বছরের বিমান দাস পেশার মন্দার কথা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘খুব বেশি দিনের কথা নয়। সাত আট বছর আগেও শিল কেটে জীবিকা নির্বাহ করতে কোনও সমস্যা হত না। এখন সময় বদলেছে। শিলে মসলা পিসে রান্নার ঝামেলা এখন আর করেন না গৃহিণীরা। রকমারি প্যাকেট মশলা তো হাতের কাছেই মেলে এখন। তবে গ্রামের কিছু মানুষ এখনও শিল ব্যবহার করেন বলেই সারাদিন ঘুরে দু’ তিনটি কাজ মেলে।’’

আলিপুরদুয়ারের শিক্ষিকা দীপিকা রায়, শঙ্করী সাহা দু'জনের কথায়, ‘‘শিলপাটার পাট চুকিয়ে দিয়েছি বহু কাল আগেই। এখন প্রতিদিনের মশলা বেটে নিই মিক্সারে। কখনও কখনও গুড়ো মশলা কিনে রান্না করি। এতে সময় যেমন কম লাগে তেমনি বাটাবাটির হ্যাপাও থাকে না। গ্রাম শহরে প্রায় প্রতিটি বাড়ির হেঁসেলের ছবি এখন এটাই। তাই মাথায় ও মুখে গামছা পেঁচিয়ে ছোট ছেনি ও হাতুরি দিয়ে শিল পাটার উপর মুখ গুঁজে দিয়ে বিভিন্ন নক্সা আঁকার ছবিটা মলিন হচ্ছে দ্রুত। আর বেশীদিন হয়তো ছবিটা দেখাও যাবে না। তাই জীবিকার তাগিদেই এখন অন্য পেশার
খোঁজে তাঁরা।

artist শিল্পী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy