Advertisement
E-Paper

ব্যর্থতা কার, দায় চাপাতে ব্যস্ত নেতারা

দুর্গাপুর, হলদিয়া ‘স্মার্ট সিটি’ ঘোষিত হয়ে কয়েকশো কোটির অনুদান নিয়ে চলে গেল। শিলিগুড়ির ঝুলি শূন্যই রইল। নেতাদের নজর অবশ্য নিজের নিজের দলের ভোটের বাক্স ভরার দিকে। স্মার্ট সিটি হওয়ার দৌড়ে হেরে যাওয়ার জন্য দায়ী কে, তাই নিয়ে শনিবার সারাদিন নেতাদের চাপান-উতোর দেখল শিলিগুড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৯

দুর্গাপুর, হলদিয়া ‘স্মার্ট সিটি’ ঘোষিত হয়ে কয়েকশো কোটির অনুদান নিয়ে চলে গেল। শিলিগুড়ির ঝুলি শূন্যই রইল। নেতাদের নজর অবশ্য নিজের নিজের দলের ভোটের বাক্স ভরার দিকে। স্মার্ট সিটি হওয়ার দৌড়ে হেরে যাওয়ার জন্য দায়ী কে, তাই নিয়ে শনিবার সারাদিন নেতাদের চাপান-উতোর দেখল শিলিগুড়ি। কেন্দ্রের শর্ত মানার বিষয়ে কোথায় খামতি রয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির, তা নিয়ে আলোচনাতেই গেলেন না নেতারা। বরং সাংবাদিক বৈঠক করে এ ওকে দুষলেন।

রাজনৈতিক দলগুলির লক্ষ্য, মহকুমা পরিষদের ভোট। স্মার্ট সিটি খেতাব হারিয়ে নাগরিক মহলে যে ক্ষোভ, তাকে ভোটবাক্সে কাজে লাগানোর তাগিদেই পরস্পরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি। শিলিগুড়ি স্মার্ট সিটি হলে তার সুবিধা মিলত মহকুমার সব গ্রামের বাসিন্দাদেরও। ফলে, শিলিগুড়িকে ‘বঞ্চনার’ অভিযোগ যে ভোটের হাতিয়ার হতে চলেছে তা বুঝতে পারছে সব পক্ষই।

স্মার্ট সিটির জন্য শিলিগুড়ির নাম রাজ্য পাঠায়নি বলে গত দু’দিন সরব হয়েছিল বাম-বিজেপি। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে তার ‘জবাব’ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। নিজের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে গৌতমবাবু এর দায় মেয়র অশোক ভট্টাচার্য় এবং বাম পুরবোর্ডের উপর চাপিয়েছেন। কী ভুল হয়েছে অশোকবাবুর? গৌতমবাবু অভিযোগ তুলেছেন, পুরবোর্ড মিটিংয়ে স্মার্ট সিটির প্রস্তাব গ্রহণ করে পাঠানো, এবং নাগরিক কনভেনশন করে বাসিন্দাদের রায় জানা, স্মার্ট সিটি করার নানা শর্তের মধ্যে এই দুটি শর্ত ছিল। রাজ্যের তরফে পুরসভাগুলিকে ডেকে সভা করে এই শর্তগুলি জানানো হয়েছিল। অশোকবাবু সেই সভাতেও ছিলেন। কিন্তু এই দুটি কাজের কোনওটিই শিলিগুড়ি পুরসভা করে পাঠায়নি। এর দায় নিয়ে অশোকবাবুর পদত্যাগ করা উচিত অথবা মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

গৌতমবাবুর অভিযোগ, ‘‘অশোকবাবুর ভুলের জন্য যোগ্যতা অর্জন পর্বের আগেই শিলিগুড়ি বাদ গিয়েছে। অথচ তিনি মানুষকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। ভাবছেন, পুরসভার তরফে প্রস্তাব না পাঠানো, নাগরিক কনভেনশন করে তা না জানানোর বিষয় কেউ জানবেন না।’’

মেয়র অশোকবাবু পাল্টা জানিয়েছেন, না-জেনেই গৌতমবাবু এ সব বলছেন। পুরবোর্ডে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল। বিরোধী দলনেতা-সহ তৃণমূলের অন্য কাউন্সিলররাও তাতে মত দিয়েছিলেন। তবে নাগরিক কনভেনশন করে পাঠানোর কোনও কথা ছিল না। মেয়র বলেন, ‘‘আমাদের দিক থেকে বোর্ডের সভায় প্রস্তাব নিয়ে পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে তা সুপারিশ করার কথা ছিল। কিন্তু রাজনীতি করতে গিয়ে রাজ্যের তরফে শিলিগুড়ির নামই পাঠানো হয়নি।’’ তাঁর দাবি, দিল্লিতে গিয়ে নানা পরিচিতদের মুখে তিনি শুনেছেন, শিলিগুড়ির নাম প্রস্তাব করাই হচ্ছে না। অশোকবাবু জানান, শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সভা করবেন, নাগরিক কনভেনশন করবেন।

বসে নেই বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু জানিয়েছেন, শিলিগুড়িতে স্মার্ট সিটি নিয়ে আন্দোলনে নামবেন তারা। সই সংগ্রহ এবং নাগরিক কনভেনশনও করা হবে দলের তরফে। রথীনবাবুর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার শিলিগুড়ির নাম না পাঠিয়ে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করেছে। এখনও দু’টি শহরের নাম ঘোষণা বাকি রয়েছে। আমাদের দাবি, দ্রুত রাজ্য সরকার শিলিগুড়ির নাম পাঠাক। আমরা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শিলিগুড়িকে অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করব।’’

শহর শিলিগুড়ি দার্জিলিঙের সাংসদ এলাকার মধ্যেই পড়ে। তাই কেন্দ্রে বিজেপির সরকার থাকায় স্থানীয় সাংসদ বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকেও পাল্টা একহাত নিয়েছেন গৌতমবাবু। মন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘দার্জিলিংকে বিশেষভাবে স্মার্ট সিটির মধ্যে আনার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সাংসদ তা নিয়ে কিছুই করেননি। তিনি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে জিতেছেন। মোর্চাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কালিম্পং, কার্শিয়াং, দার্জিলিংকে নিয়ে স্মার্ট সিটির বিশেষ প্যাকেজের জন্য পাঠাতে পারতেন।’’

বিজেপি অবশ্য জমি ছাড়তে রাজি নয় তৃণমূল-সিপিএম কাউকেই। মন্ত্রীকে বিঁধে রথীনবাবুর অভিযোগ, ‘‘স্মার্ট সিটির জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বারবার সাংসদের প্রসঙ্গ তুলছেন। রাজ্য নাম পাঠালে সাংসদ সুপারিশ করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্য কেন নাম পাঠাল না, সে বিষয়ে গৌতমবাবুকে বাসিন্দাদের জবাব দিতে হবে।’’

মেয়র অশোকবাবুর বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়েছেন রথীন। সম্প্রতি অশোকবাবু দিল্লিতে গিয়ে নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে তাঁর অভিযোগ, ‘‘অশোকবাবু প্রথমে বলেছিলেন, স্মার্ট সিটি চাই না। পরে বলছেন আন্দোলন করবেন। কখন কী বলছেন, উনি নিজেই বুঝতে পারছেন না।’’ অশোকবাবু অবশ্য জানান, তিনি স্মার্ট সিটি বিষয়ে দলের বিরোধিতার কথা জানালেও, শিলিগুড়িতে স্মার্ট সিটি করার জন্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করেছেন।

তবে এই তিন দলের মতো এখনও আগ বাড়িয়ে বিরোধিতায় যাচ্ছে না কংগ্রেস। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘এটা টেকনিক্যাল ব্যাপার। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে তো স্মার্ট সিটি আসবে না। শিলিগুড়ির তার নিজের যোগ্যতাতেই এই তালিকায় থাকার কথা ছিল। তা না হওয়াটা কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষেরই ব্যর্থতা। মানুষ এর জবাব দেবেন।’’

নাট্যকার পার্থ চৌধুরী বলেন, ‘‘আগেও বলেছি, আবার বলছি, রাজনৈতিক চাপান-উতোর দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। শিলিগুড়ি যাতে স্মার্ট সিটির মর্যাদা পায়, তার জন্য এ বার কাজের কাজ করা হোক।’’

Meeting Siliguri smart city CPM Trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy