Advertisement
E-Paper

ফেলে আসা আনন্দ, বিষাদের সাক্ষী ছবি

সোবার্স এসেছিলেন? সত্যি? ছেলেছোকরারা মনে করেন ডাহা গুল দিচ্ছেন বয়স্করা। প্রবীণেরা তখন আস্তিন গুটিয়ে জানিয়ে দেন, শুধু স্যার গারফিল্ড সোবার্স নন। মনসুর আলি খান পটৌডীও।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৮
ফোটোগ্রাফার তরুণকান্তি রায়।

ফোটোগ্রাফার তরুণকান্তি রায়।

সোবার্স এসেছিলেন? সত্যি?

ছেলেছোকরারা মনে করেন ডাহা গুল দিচ্ছেন বয়স্করা। প্রবীণেরা তখন আস্তিন গুটিয়ে জানিয়ে দেন, শুধু স্যার গারফিল্ড সোবার্স নন। মনসুর আলি খান পটৌডীও। তাঁরা স্বচক্ষে দেখেছেন, কোচবিহার রাজবাড়ির মাঠে বল করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সোবার্স। ব্যাট করছেন টাইগার পটৌডী।

কিন্তু বিশ্বাস করাবেন কী করে? সাক্ষী কই? তখন অমোঘ অস্ত্র হল ফোটোগ্রাফ। সে কালের কোচবিহারের সেই ছবি পুরনো হয়ে গিয়েছে। তাতেই যেন তার জেল্লাও বেড়েছে। এই ফোটোগ্রাফ ছাড়া সত্যিই কে-ই বা বিশ্বাস করতেন এ সব কথা। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, ‘‘ষাটের দশকে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের উদ্যোগে বাংলা একাদশের সঙ্গে কোচবিহার একাদশের ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। তখন সোবার্স, পটৌডী এসেছিলেন। খেলেছিলেন রাজবাড়ির মাঠে।’’ তিনি জানান, এসেছিলেন চুনী গোস্বামীও। ক্রিকেটার চুনীর নামডাকও তখন কম ছিল না!

শুধু গৌরবেরই নয়। বিষাদের সাক্ষীও হয়ে থাকে ফোটোগ্রাফ। ১৮৯৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল কোচবিহার। সে সময় রাজা ছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। রাজবাড়ি ছিল তিন তলা। ওই ভূমিকম্পে রাজবাড়ির বহু অংশ ভেঙে পড়ে। উপরের তলাটি ভেঙে যায়। তখন থেকে রাজবাড়ি দোতলা হিসেবেই পরিচিত। সেই ছবিও সময়ের দলিল। কয়েক জন তা সংরক্ষিত করে রেখেছে। এর বাইরেও মহারানি সুনীতিদেবীর ছবি, রাজকুমারী গায়ত্রীদেবীর ছবি, মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের ছবি পাওয়া যায়।

তরুণকুমার রায় যেমন অ্যালবাম থেকে বের করে আনেন কোচবিহারের শেষ মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের কফিনবন্দি শবদেহের ছবি। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে শহরের ছবি তুলছেন তিনি। তাঁর কাছেই ছিল পটৌডী, সোবার্সের ছবি। সেই সত্তরের দশকে কোচবিহারে আসা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা কে নেই তাঁর অ্যালবামে। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি জানান, তখন শহরে যাদের ক্যামেরা ছিল, তাঁরা সাধারণত পরিবারের ছবিই তুলতেন। তাঁর শখ ছিল আশেপাশের জীবনের, নিসর্গেরও ছবি তোলা। কাকা শ্যামাকান্তবাবুর ক্যামেরাটি ছিল ভরসা। পরে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজে একটি ক্যামেরা কেনেন। পড়তেন জেনকিন্সে। এনসিসি করতেন। কোথাও খেলা বা অনুষ্ঠানে ডাক পড়ত। তখন ব্যাগে রাশিয়ার বানানো নিকি ক্যামেরাটিও ভরে নিতেন। সেই ভাবেই শুরু কোচবিহারের ইতিহাস ফ্রেমবন্দি করার কাজ। বয়সের ভারে এখন অনেকটাই কাবু তরুণ। তবুও নেশা ছাড়তে পারেননি। তরুণ বলেন, “ছবির মধ্যেই তো জীবন খুঁজে পাই। সেই যে স্কুলে পড়তে পড়তে ছবি তোলাকে ভালবেসেছিলাম। সেই ভালবাসাই মহীরুহ হয়ে গিয়েছে।”

অরূপবাবু জানান, রাজ আমলে রাজাদের উদ্যোগেই মূলত ছবি তোলা হত। তাঁরা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান বা এমনিতেও ছবি তোলার জন্য বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড কোম্পানির ফটোগ্রাফারদের নিয়ে আসতেন। তাঁদের তোলা কিছু ছবি এখনও কিছু গ্রন্থে পাওয়া যায়। এর বাইরেও কিছু ছবি পাওয়া যায়, তবে তা কাদের তোলা সে ব্যাপারে সুর্নিদিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তরুণবাবুর অ্যালবামেও সেই সময়ের কিছু ছবি সংগ্রহে রয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর অ্যালবামে রয়েছে প্রায় তিন হাজার ছবি। তিনি বলেন, “এই স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।”

দেখুন গ্যালারি:

পুরনো ক্যানভাসে কোচবিহার শহর

Cooch Behar Memory Namitesh Ghosh Mansoor Ali Khan Pataudi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy