আপ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে এক শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত দুই যুবককে এখনও চিহ্নিতই করতে পারেনি রেল পুলিশ। অথচ, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দুই যুবক ফোন করে বন্ধুবান্ধবদের স্টেশনে আসতে বলেছিল। পুলিশ অবশ্য জানতে পেরেছে, ওই দুই যুবকের বাড়ি পাশেই সামশেরগঞ্জ থানার কামালপুর গ্রামে।
বুধবার রাতে ওই ট্রেনে এক শিক্ষককে মারধর ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে নিমতিতা স্টেশনে তদন্তে আসেন রেল পুলিশের অফিসারেরা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই যুবকেরা মুর্শিদাবাদের খাগড়াঘাট স্টেশন থেকে ওই ট্রেনে ওঠে। এস ৬ কামরায় ৬৫ থেকে ৭২ নম্বর সিটে বসেছিলেন ৮ জন জলপাইগুড়ির যাত্রী। ওই দুই যুবক ওই কামরায় উঠে ওই আসনগুলিতেই কিছু ক্ষণ বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সংরক্ষিত কামরায় কেন তাঁরা উঠেছেন, তাই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। তা থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। এরপরই ট্রেনটি নিমতিতায় ঢোকার আগে ওই দুই যুবক ফোন করে বন্ধুদের স্টেশনে ডেকে নেয়। ট্রেনটি নিমতিতায় ঢোকার আগেই ওই ছেলেরা মারমুখী হয়ে প্রাথমিক শিক্ষক শ্যামসুন্দর পাণ্ডের উপর চড়াও হয়। ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়াতেই দুই যুবকের ডাকে স্টেশনে আসা বন্ধুরা চড়াও হয় ওই শিক্ষকের উপর। শিক্ষককে হেনস্থার হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন সঙ্গী ছাত্রীরাও। শ্যামসুন্দরবাবুর মাথায় আঘাত লেগেছে। ট্রেনের মধ্যেই মালদহ স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। সেই সময় পাশের কামরায় আরপিএফ জওয়ানেরা থাকলেও তারা কোন হেলদোল দেখায়নি। ওই ট্রেনটি মালদহ স্টেশনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা। মালদহ জিআরপিতে লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হয়। জিআরপির আইসি কৃষ্ণ গোপাল দত্ত বলেন, আমরা অভিযোগ গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানাতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে ওই শিক্ষক বা নিগৃহীত ছাত্রীরা মালদহে পৌঁছে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি। লিখিত অভিযোগ করেছেন কুণাল রায় নামে অন্য এক যাত্রী।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার তদন্তে নিমতিতা স্টেশনে আসেন ধুলিয়ান স্টেশনের জিআরপি-র ইনচার্জ শুভংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। আজিমগঞ্জ জিআরপির ওসি মহাবীর বেরা বলেন, “ঘটনাস্থলে রেল পুলিশ ছিল কি না, কারা ছিল, তারা কেন ব্যবস্থা নেননি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।’’
তবে চলন্ত আপ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি এবং তার প্রতিবাদ করায় এক স্কুল শিক্ষককে মারধর করার ঘটনায় ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। যাত্রীদের অভিযোগ, সংরক্ষিত কামরায় প্রায়ই সাধারণ যাত্রীরা উঠে পড়ে। আর কামলাতে উঠেই বসার আসন নিয়ে বচসা বাঁধিয়ে দেয়। তাতে রেলকর্মীদের একাংশও জড়িত থাকে বলে অভিযোগ। মালদহের যাত্রী সুরক্ষা কমিটির সদস্য নরেন্দ্র নাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘একাংশ আরপিএফের মদতে সাধারণ কামরার যাত্রীরা উঠে পড়ে সংরক্ষিত কামরায়। এমন ঘটনায় অধিকাংশ ট্রেনেই দেখা যায়। তবে এদিন চলন্ত ট্রেনের মধ্যে যা ঘটল তা খুবই নিন্দনীয়।’’ যদিও রেল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মালদহ ডিভিশনের ডিআরএম মহিত সিংহকে একাধিকবার ফোন করেও কথা বলা যায়নি।