গ্রামের টিউবওয়েলে স্নান করার ‘অপরাধে’ এক কিশোরীকে গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছিল প্রতিবেশী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই ব্যক্তির আচরণের প্রতিবাদ করেন আর এক প্রতিবেশী। কিন্তু অভিযুক্ত ও তার বাড়ির লোকজনের পাল্টা প্রহারে মারা গেলেন প্রতিবাদী রাজকুমার মণ্ডল (৪২)। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দু’জন। শনিবার পুরাতন মালদহের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের কুতুবপুর গ্রামের এই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজকুমারকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন তাঁর শ্বশুর সুবল মণ্ডল ও প্রতিবেশী আশু মণ্ডল। তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসকেরা সুবলকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন। ওইদিন রাতেই অভিযুক্ত রাধা মণ্ডল ও তার বড়ছেলে মিঠুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অপর অভিযুক্ত সিন্টু পলাতক। রবিবার ধৃতদের মালদহ জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “অন্য অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামবাসীদের জল নেওয়ার জন্য একটি টিউবওয়েল রয়েছে। পুজো উপলক্ষে রাজকুমারের বাড়িতে আত্মীয়েরা এসেছিলেন। তাঁর খুড়তুতো ভাইয়ের মেয়ে টিউবওয়েলে স্নান করছিল। টিউবওয়েলের পাশেই অভিযুক্ত রাধার মুদির দোকান। অভিযোগ, স্নান করার ‘অপরাধে’ অভিযুক্ত কিশোরীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে রাধা। ঘটনার প্রতিবাদ করেন রাজকুমার। অভিযোগ, বাঁশ নিয়ে রাধা ও তার দুই ছেলে রাজকুমারের উপরে চড়াও হয়। মাথায় আঘাত করে। জামাইকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন সুবল ও প্রতিবেশী আশুও। ঘটনাকে কেন্দ্র করে হইচই পড়ে যায় গ্রাম জুড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে গেলে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রামবাসীরা আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা রাজকুমারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর সুবলের মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় তাঁকে কলকাতায় রেফার করা হয়। ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকেরা। মৃতের স্ত্রী বলেন, “ওই টিউবওয়েলে স্নান করার নিয়ম নেই। কিন্তু আমাদের আত্মীয় মেয়েটি না জেনেই স্নান করছিল। আর রাধা তাকে খুবই গালাগালি দিচ্ছিল। আমার স্বামী প্রতিবাদ করায় তাকে খুন করা হল। আমার ছোট ছোট চার ছেলেমেয়ে রয়েছে। এখন কী করে চলবে আমাদের কিছুই বুঝতে পারছি না।” গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির রঞ্জিত মল্লিক বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।”