এ বছরের গোড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় পাঁচ হাজার নাবালিকা অপরিণত গর্ভধারণ করেছে শেষ দু’বছরে। করোনা আবহে ঘটা ওই তথ্য নাড়িয়ে দেয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনকে। জেলায় চালু হয় ‘প্রত্যয়ী মিশন’। মঙ্গলবার মিশনের কমান্ড সেন্টার চালু হল জেলায়। ‘চাইল্ডলাইন’ (১০৯৮) নম্বরে আসা ফোন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের তুলে আনা তথ্যের ভিত্তিতে জেলার ১,৯৮৮ জন নাবালিকাকে বাল্যবিবাহের নিরিখে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রের মাধ্যমে তাঁদের উপরে নজর রাখাও শুরু হয়ে গেল। চিহ্নিত হয়েছে ১৫০টি গ্রাম।
কী কাজ করবে এই সেন্টার? প্রশাসন সূত্রে খবর, পুরনো বার্তাই নতুন কায়দায় ফোন করে দেবেন কর্মীরা। বিয়ে হতে পারে এমন নাবালিকার অভিভাবককে জানানো হবে, অপরিণত বয়সে বিয়ে দিলে অভিভাবক তো বটেই, হবু বরেরও জেল জরিমানা হতে পারে। তা না করে বরং মেয়েকে স্কুলে পাঠান।
বাল্যবিবাহের নিরিখে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা রাজ্যের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। করোনার পর থেকে স্কুলছুট, অপরিণত বয়সেই বিয়ের তথ্য মিশনের মাধ্যমে তুলে আনা হচ্ছে। ১১ দফা প্রশ্নের ভিত্তিতে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে ঝুঁকির মাপকাঠিও তৈরি হচ্ছে নিরন্তর। জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণের উদ্যোগেই মূলত এই মিশন চালু হয়। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে মিশনের মাধ্যমেই নাবালিকা বিয়ের খবর আসা দ্বিগুণ হয়েছে। সবগুলি শাখার মধ্যে আরও সমন্বয় করতেই এই কমান্ড সেন্টার।’’ কাদের স্কুলে উপস্থিতি কম, কারা দরিদ্র, ‘কন্যাশ্রী-১’ প্রকল্পের সুবিধা কারা পাচ্ছে না, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার কারা—এ সব সমীক্ষা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে চলছে। সে তথ্য ছাড়াও, কন্যাশ্রী ক্লাব, চাইল্ডলাইন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং শিশুসুরক্ষা কমিটিগুলির খবরের ভিত্তিতে কমান্ড সেন্টার পদক্ষেপ করবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, নাবালিকা বিয়ের খবর প্রায় ৯০ শতাংশ তাদের কানে পৌঁছচ্ছে। মিশন চালু হওয়ার পরে, চলতি বছরের গত কয়েক মাসে ৬০ জন নাবালিকার বিয়ে ঠেকানো গিয়েছে। মিশনটিকে আরও কার্যকরী করে ১০০ শতাংশ খবর পাওয়াই লক্ষ্য প্রশাসনের। তারই একটি ধাপ হল ‘কমান্ড সেন্টার’।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)