Advertisement
E-Paper

কাদা পথে হারায় পুজো

কিন্তু প্রকৃতি কি আর সে কথা শোনে! কাদামাটিতে ভরা পথের পাশে বাঁশঝোপের তলায় ছোট্ট ঘরে অসুস্থ কিশোরী মেয়েকে নিয়ে থাকেন আনে গুড়িয়া। ভোরে পাতা চুঁইয়ে টুপটাপ শিশিরের শব্দ শুনতে পান।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৪
প্রান্তিক: পুজোর সময়ও কুয়ারন যেন উৎসব থেকে দূরে। নিজস্ব চিত্র

প্রান্তিক: পুজোর সময়ও কুয়ারন যেন উৎসব থেকে দূরে। নিজস্ব চিত্র

নতুন পাকা রাস্তা কুয়ারন গ্রামে ঢোকার মুখেই হারিয়ে গিয়েছে। তার পরে কাদামাটি মাখা পথ।

কিন্তু প্রকৃতি কি আর সে কথা শোনে! কাদামাটিতে ভরা পথের পাশে বাঁশঝোপের তলায় ছোট্ট ঘরে অসুস্থ কিশোরী মেয়েকে নিয়ে থাকেন আনে গুড়িয়া। ভোরে পাতা চুঁইয়ে টুপটাপ শিশিরের শব্দ শুনতে পান। আর পাঁচটা জায়গার মতো বালুরঘাটের কুয়ারন গ্রামেও মাঠ জুড়ে কাশ ফুল ফুটে থাকে। ভেসে আসে ঢাকের শব্দ। প্রায় আধ কিলোমিটার দূরের অন্য একটি গ্রাম থেকে। সেই শব্দেই পুজোর সময় স্থির করে কুয়ারন।

কুয়ারনে যে পুজো নেই। গ্রামের এক কোণে পড়ে থেকে অপলক ভাবে চেয়ে থাকেন বৃদ্ধা আনে বা সারা হোড়েদের মতো অনেকে। কোনওমতে পুজোর সন্ধেয় কুয়ারন থেকে যান পাশের গ্রাম মামনায়।

কেন পুজো নেই কুয়ারনে?

ফোকলা মুখ হাসিতে ভরে ওঠে। বড় বিষণ্ণ সেই হাসি। সাড়ে তিনশোর মতো মানুষ থাকেন এই গ্রামে। বেশিরভাগই দিনমজুরি করে সংসার চালান। সেই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেখানে কী করে দুর্গার আরাধনার আয়োজন হবে! প্রতিমার দামই তো উঠবে না!

তা বলে কি জগজ্জননীর হাসি মুখ এই গ্রামে পড়ে না? মাঠ ও ঝোপ থেকে কাশের ঝাড় ভেঙে ফুলের তন্তু এক করে গরম কাঁথা তৈরির পুরনো প্রথা এখনও এই গ্রামে রয়েছে। সেই কাঁথায় লেগে থাকে সর্বাণীর স্নেহের স্পর্শ!

পুকুর ও ডোবার কালো জল ঘেঁটে কুয়ারনের নারী পুরুষ কুচো মাছ ও গেঁড়ি-গুগলি সংগ্রহ করেন। ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে বাবা মায়ের তৎপরতার সঙ্গে দশভুজার স্নেহের মিল কি টের পাওয়া গেল? প্রকৃতিই সেখানে দেবীর রূপ। কচিকাচাদের হুটোপুটি করে খেলাধুলো সব প্রকৃতির সাজসজ্জার সঙ্গেই।

তবু পুজো তো হয় না। ভর দুপুরেই গোটা কুয়ারন যেন বিষণ্ণতায় ঢেকে যায়। অন্ন চিন্তায় সকাল থেকে ডুবে থাকেন হতদরিদ্র বাসিন্দারা।

এলাকার প্রবীণ জোসেফ টুডুর কথায়, ‘‘অনেক আগে আমাদের গ্রামের অনেকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছেন।’’ তার পরে সুদূর বিদেশ থেকে তাঁদের জন্য সাহায্য খয়রাতি মিলত। এখন সেই সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে একাংশ ছেলেমেয়ে আবাসিক মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করে। কিন্তু গত পাঁচ বছরের মধ্যে এলাকার অকেজো হয়ে পড়ে থাকা নলকূপগুলি মেরামতি হয়নি। আনের দাওয়ায় হস্তচালিত নলকূপ বসানো হবে বলে দুমাস আগে জানান পঞ্চায়েত সদস্য পিটার বারু। কিন্তু বৃদ্ধা আনেকে এখনও দূরে গিয়ে জল বয়ে আনতে হয়।

চাষ জমির আলের উপর ইতিউতি কাশফুল হাওয়ায় দুলে চারদিকে পুজো গন্ধের সুবাস গায়ে মেখে জীবনযাত্রার অস্তিত্ব জানান দেয় কুয়ারনের বাসিন্দাদের উঠোনে তৈরি মাটির উনুনে। তাতে ধান সেদ্ধ থেকে রান্নাবান্না সবই হয়। হাঁড়িতে জল চাপিয়ে ঘরের অন্নপূর্ণা হয়তো গিয়েছে পাশের বাড়িতে চাল ও আনাজ ধার করতে। তখনই দেখা গেল, গায়ে কাদা মাখা গণেশ, কার্তিকরা ডোবায় কুচো মাছ সংগ্রহ করে ঘরের পথে ছুটছে।

প্রবীণ বৃদ্ধ সাবিস্তিয়ান মার্ডি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো খরচের বড় বোঝা। সামাল হয় নাকি? খাবার জোগাড়েই সকাল থেকেই বাসিন্দারা যে ব্যস্ত।’’

দূরের এলাকার পুজো মণ্ডপের ঢাকের বাজনা ভেসে আসে কুয়ারনে। গরম ভাত ফোটার গন্ধে পেয়ে আল রাস্তা ধরে বাড়ির পথে ছুটে চলে কচিকাচার দল। ওই ঘরেই বাস ওদের মা, মানবরূপী দেবী অন্নপূর্ণার। কেউ আনে গুড়িয়া, সুভাসিনী গুড়িয়া হয়ে। কেউবা সারা এবং তাসিয়া হোড়ে নামে।

Durga Puja Kuaron Poverty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy