আধো-অন্ধকার স্টেশনে দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার ট্রেন। প্ল্যাটফর্মের থেকে কিছুটা দূরে বিক্ষিপ্ত ভাবে জটলা। বাতাসে নেশার ঝাঁঝালো গন্ধ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। নিরাপত্তার জন্য আরপিএফ থানায় যত বারই ফোন করা হয়েছে, উত্তর মিলেছে, ‘‘দেখছি।’’
অভিযোগ, প্রায় তিন ঘণ্টা কেটেছে এ ভাবেই। প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে ভুগেছেন যাত্রীরা। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত কাঞ্চনকন্যা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। বারবার খবর পাঠিয়েও আরপিএফের জওয়ানদের স্টেশনে আনা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ। যাত্রীদের নয়, অভিযোগ রেল কর্তাদের একাংশের। বুধবার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার সদর থেকে। আরপিএফের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, খবর পেয়ে দু’জন অফিসারকে স্টেশনে পাঠানো হয়েছিল। স্টেশন ম্যানেজার সহ রেলের আধিকারিকরা আরপিএফের কাউকে দেখতে পাননি বলেই এই বিভ্রান্ত তৈরি হয়েছে বলে দাবি।
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের নিউ জলপাইগুড়ির সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীল বলেন, ‘‘একটি অভিযোগ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস হবে না।’’
ডালখোলায় রেল অবরোধের জেরে মঙ্গলবার রাতে এনজেপি সহ লাগোয়া বিভিন্ন স্টেশনে ১৬টি দুরপাল্লার ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। রাত আটটা নাগাদ শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে কলকাতাগামী কাঞ্চনকন্যা ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। শহরের মধ্যে হলেও, টাউন স্টেশনের চারপাশ সন্ধের পরে সুনসান হয়ে যায়। পাশের এলাকায় সকাল থেকেই নেশার আসর বসার অভিযোগ রয়েছে। সন্ধ্যার পরে প্ল্যাটফর্মের কোণে, লাইনের ধারেও দেদার জুয়া এবং নেশার আড্ডার অভিযোগ রয়েছে। রেলের তরফে দাবি, রাতের বেলায় কাঞ্চনকন্যা ট্রেন টাউন স্টেশনে এসে দাঁড়ানোর পরেই আরপিএফকে বাড়তি বাহিনী নামিয়ে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্টেশনের কর্মী-অফিসারেরা আরপিএফ থানায় ফোন করতে থাকেন। প্রতিবারই দেখছি-দেখব করে ফোন কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সাড়ে দশটা নাগাদ উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের এক কর্তাকে ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ অভিযোগ জানালে, আরপিএফ সক্রিয় হয়। আরপিএফের ইন্সপেক্টর সঞ্জিত সরকারের দাবি, ‘‘কোনও বিভ্রান্তি হতে পারে। রেলের আধিকারিকরা হয়ত আমাদের দুই কর্মীকে দেখতে পাননি বলে সমস্যা হয়েছে।’’ দুরপাল্লার ট্রেনের দায়িত্বে মাত্র দু’জন অফিসার? সঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে দুরপাল্লার ট্রেন থামবে তা আগে থেকে জানানো হয়নি। তাই অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা যায়নি।’’