E-Paper

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে রং নিয়ে সতর্ক প্রশাসন

মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু এ বারের সফরে কোচবিহারে এসেছিলেন, তাই জেলার কোনও সরকারি ভবনে এমন রং তাঁর নজরে পড়েছে বলেও চর্চা শুরু হয়েছে।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪ ০৮:৩৮
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিভিন্ন সরকারি ভবনের টিনের ছাউনির লাল, গেরুয়া রং নিয়ে নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হওয়ায়, ওই ব্যাপারে সতর্কতায় জোর দিচ্ছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়ির কাছে রেল দুর্ঘটনায় জখমদের দেখতে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও যান। সেখান থেকে রাতেই কোচবিহারে পৌঁছন তিনি।

বৃহস্পতিবার নবান্নের সভাকক্ষে সাম্প্রতিক উত্তরবঙ্গ সফরের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি এ বার উত্তরবঙ্গে গিয়ে দেখলাম, যত ভবনের টিনে লাল আর গেরুয়া রং লাগিয়ে দিয়েছে। যাঁরা সে সব সরবরাহ করে, তাঁদের ডেকে বলুন।” ওই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা আমাদের রং নয়।” তার জেরেই খোঁজখবর শুরু হয় নানা মহলে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারি ভবনের ব্যাপারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু এ বারের সফরে কোচবিহারে এসেছিলেন, তাই জেলার কোনও সরকারি ভবনে এমন রং তাঁর নজরে পড়েছে বলেও চর্চা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা মাথায় রেখে সতর্ক নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। ওই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, সে দিকে নজর রাখা হবে। ভবিষ্যতে এ রকম কাজ হবে না।” প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি ভবনের টিনের রং নিয়ে আরও সতর্ক থাকব।’’

কোচবিহার শহরকে ‘হেরিটেজ়’ হিসাবে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের আর্থিক বরাদ্দে। বেশ কিছু প্রাচীন ভবন থেকে রাজ-আমলের স্থাপত্য নির্দশনের সংস্কার, সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। তৈরি হয়েছে ‘হেরিটেজ়’ স্বাগত তোরণ। সে সব ক্ষেত্রে আইআইটি খড়গপুরের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে কাজ হয়। ‘হেরিটেজ়’ রঙের ঐতিহ্য কোথাও বদল হয়নি বলেও একটি সূত্রের দাবি। তবে কোচবিহার ঘুরে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যাতায়াতের পথে জেলার কোথাও কোন বা স্কুল, গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনের তেমন রং তাঁর নজরে পড়েছে কি না, তা নিয়ে খোঁজ হচ্ছে।

বিরোধীরা অবশ্য এতে গুরুত্ব দিতে নারাজ। যদিও অভিযোগ, কোচবিহারের দিনহাটায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বিজেপির বোর্ড হতে ভেটাগুড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে গেরুয়া রং করা হয়েছিল। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে, দলবদলে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় ওই রং পরিবর্তন করা হয়। মাথাভাঙার বড় শোলমারি, রুইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রবেশ গেটে গেরুয়া রং করা হয়েছিল।

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, “সরকারের নির্দেশিকা মেনেই সরকারি ভবনের রং করা উচিত। বিজেপি কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে তা অমান্য করার চেষ্টা করেছিল।”

বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় অবশ্য বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। রং নিয়ে রাজনীতি আমরা করি না। ২৪টি পঞ্চায়েতে বোর্ড হয়েছিল আমাদের দলের। তার মধ্যে দু’একটি ক্ষেত্রেই প্রধানেরা চেয়েছিলেন বলে রং বদল করা হয়েছিল। তৃণমূল সব কিছুই নীল-সাদা করার চেষ্টা করছে।”

সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ের মন্তব্য, “রংয়ের কথা বলে মানুষের নজর আসল সমস্যা থেকে ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।”

বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কোচবিহারে রাজবাড়ির রং নিয়েও কয়েক বছর আগে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। শহরের জেনকিন্স স্কুল ভবনের রং বদলের নির্দেশিকা না থাকলেও তেমন প্রচারে গুঞ্জন ঘিরেও চর্চা হয়েছিল।

জেনকিন্স স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রিয়তোষ সরকার বলেন, “রং বদলের লিখিত নির্দেশ, প্রস্তাব কখনও আসেনি। স্কুলের হেরিটেজ় ভবনের রং আগেও যা ছিল, এখনও তেমনই রয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

North Bengal Development Department North Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy