Advertisement
E-Paper

প্লাস্টিক নিয়ে সরব শুধু বামেরা, ক্ষোভ

পুরভোটের বাজারে শহর জুড়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিবাগের ছড়াছড়ি। অন্তত পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ এমনটাই। মাছের বাজার থেকে মিষ্টির দোকান, পাড়ায় পাড়ায় সব্জি বা ফলের ঠেলা গাড়ি থেকে মুদির দোকানের কোথাও বাদ নেই বলে অভিযোগ। আগামী ২৫ এপ্রিল শিলিগুড়ি পুরভোট। সব দলই ইস্তাহার প্রকাশ করে দিয়ে পুরোমাত্রায় প্রচারে নেমে পড়েছে।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৮

পুরভোটের বাজারে শহর জুড়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিবাগের ছড়াছড়ি। অন্তত পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ এমনটাই। মাছের বাজার থেকে মিষ্টির দোকান, পাড়ায় পাড়ায় সব্জি বা ফলের ঠেলা গাড়ি থেকে মুদির দোকানের কোথাও বাদ নেই বলে অভিযোগ। আগামী ২৫ এপ্রিল শিলিগুড়ি পুরভোট। সব দলই ইস্তাহার প্রকাশ করে দিয়ে পুরোমাত্রায় প্রচারে নেমে পড়েছে। বুধবার ইস্তাহার প্রকাশ করেছে কংগ্রেস ও বিজেপিও। প্লাস্টিক ক্যারিবাগ প্রসঙ্গ বামেদের ইস্তাহারে কিছুটা জায়গা পেলেও কংগ্রেস, তৃণমূল বা বিজেপি কেউ-ই তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই না বলায় পরিবেশপ্রেমীরা রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।

পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য, কংগ্রেস, বিজেপি বা তৃণমূলের মত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ইস্তাহারে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ বন্ধ করা নিয়ে একটি কথাও বলেননি। অথচ এই শিলিগুড়ি পুরবোর্ডই শহরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ৪০ মাইক্রনের নিচে ক্যারিবাগ নিষিদ্ধ রাখার আইনকে কার্যকরী করে বসুন্ধরা পুরস্কার‌ও পেয়েছিল। এই দলগুলিই একযোগে মিছিল হেঁটে সোচ্চার হয়েছিল। অথচ মানুষের কাছে ইস্তাহারের মাধ্যমে অঙ্গীকার করার সময়, গত বোর্ডের ক্ষমতায় থাকায় কংগ্রেস বা তৃণমূল (২১ মাস) সরাসরি একটি কথাও বলল না।

বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বামেরা। বামফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এলে শহরে কী করতে চাই তা পরিস্কার করে ইস্তাহারে লিখেছি। সেখানে শহর জুড়ে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি রয়েছে। আসলে বিরোধীদের এসব নিয়ে কোনও সদিচ্ছাই নেই তা ইস্তাহারগুলি দেখলেই পরিস্কার।’’

যদিও শাসক তৃণমূল ‘ক্লিন সিটি-গ্রিন সিটি’, কংগ্রেস ‘প্রাকৃতিক এবং বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রেখে উন্নয়ন’ আবার বিজেপি ‘স্মার্ট সিটির প্রকল্পে’র মধ্যেই ক্যারিবাগের বিষয়টি থাকবে বলে দাবি করেছে। সেই সঙ্গে তাঁরা বামেদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জেলার একাংশ নেতার অভিযোগ, পুরসভার বামেরা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল। সেই সময়ই ক্যারিবাগের বাড়বাড়ন্ত হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণের আইন চালু হলেও সে ভাবে ক্যারিবাগের ব্যবহার বা বিক্রি বন্ধ করতে পারেনি বামেরা। বাম বিরোধীদের আমলেই কাজ হয়েছে। তাই ভোটের মুখে বামেদের বড় বড় কথার কোনও মানেই হয় না।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা গ্রিন সিটি-ক্লিন সিটির কথা বলেছি। তার মাধ্যমেই তো প্লাস্টিক ক্যারিবাগ বন্ধ করা হবে। চমক দেওয়ার চেষ্টাটা বামেদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওঁরা কী করেছে, তা গতবোর্ডগুলিতে মানুষ দেখেছে।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রাখার উন্নয়ন এবং বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুও স্মার্ট সিটি গড়ে তা বন্ধ করা হবে বলে দাবি করেছেন। দুই জনে আলাদা আলাদাভাবে দাবি করেছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রাখাকে তাঁদের দল গুরুত্ব দিয়েছে অনেক বড় আকারে।

সরকারি সূত্রের খবর, গত বছরের মা‌ঝামাঝি প্লাস্টিক বিক্রেতাদের সংগঠনের কথা আবেদনের ভিত্তিতে পুরানো নির্দেশ সরিয়ে রেখে গ্রিন ট্রাইবুনাল একটি রায় দেয়। তাতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জন শুনানি করে নতুন করে বিষয়টি ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তা এখনও হয়নি বলে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, গোটা দার্জিলিং জেলা তো বটেই শিলিগুড়ি পুর এলাকা এবং মহকুমায় ক্যারিবাগ নিষিদ্ধ ছিল। গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশের পর তা আর কার্যকারী নেই। এর পরে গত নভেম্বরে সর্বদল মিছিল, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে স্মারকিলি দেওয়ার মত বাজারে বাজারে প্রচার অভিযান হয়। তখন নেতারা অনেক আশ্বাসই দেন। আদতে এখন দেখা যাচ্ছে, পুরোটাই রাজনৈতিক তরজা হয়েই থাকছে।

পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু জানান, ভোটের বাজারে দলগুলি বোর্ড দখলের লড়াইয়ে নেমে পড়ায় প্লাস্টিক ক্যারিবাগ নিয়ে কারও এখন আর মাথাব্যথা নেই। এই নিয়ে ইস্তাহারেও তো অধিকাংশ দলই স্পষ্ট করে কিছুই বলল না। এমনকি, পুরসভার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরাও গত ছয়মাস ধরে কোনও অভিযানই করেননি। শহরে সর্বত্র নিষিদ্ধ ক্যারিবাগে ছেয়ে গিয়েছে। প্রকাশ্যে খোলাখুলিভাবে তা বিক্রি এবং ব্যবহার হচ্ছে। ভয়ানক পরিস্থিতি।

এই নিয়ে পুর কমিশনার সোনাম ওয়াংদি ভুটিয়ার যুক্তি, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের জনশুনানি করার কথা রয়েছে। তার পরে আইন কী হবে তা ঠিক হবে। আমরা পর্ষদকে চিঠি দিয়েছে। এখনও তো কিছুই জানানো হয়নি।’’ যদিও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, জনশুনানির প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টিতে কিছু জটিলতা থাকায় দেরি হচ্ছে। দ্রুত তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

koushik chowdhury siliguri municipal election cpm congress bjp trinamool tmc plastic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy